অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড-ভারতের কথা না হয় বাদই থাকলো। দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড-আয়ারল্যান্ডের মতো দলগুলোকেও এখন পর্যন্ত নিজ দেশে খেলার আমন্ত্রণ-ও দিতে পারেনি পাকিস্তান। তবুও তারা খুব করে চাইছে, আসছে বছরের শুরুতেই যেন দেশটিতে সফর করে বাংলাদেশ। অথচ ২০০৯ সালে লঙ্কান টিম বাসে হামলার পর পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে পাকিস্তান সফর করেনি কেউ-ই। তাইতো প্রশ্ন উঠেছে কেন অনিরাপদ এই দেশটিতে দল পাঠাতে রাজি হচ্ছে বিসিবি।
পাকিস্তান। যেখানে এখনও ভোর হয় আত্মঘাতি বোমা হামলা, গ্রেনেড কিংবা গুলির শব্দে। যেখানে একদিন বেঁচে থাকা মানে, আরো একটা দিন বাঁচা। বছরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাকিস্তানে নিত্যই বাড়ে লাশের সংখ্যা। দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাসবাদ নিয়ে গবেষণা করা পোর্টাল SATP অনুসারে, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ বেড়েছে ৮৯%।
এতো গেলো পরিসংখ্যান। সংখ্যার হিসেবে যা আরো ভয়াবহ। ২০০৪ থেকে ১৯ অব্দি' বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠি আর উগ্রবাদীর হামলায়, পাকিস্তানে প্রাণ হারায় অর্ধ লক্ষের বেশি মানুষ। যা চলছে এখনও। দেশটিতে সন্ত্রাসবাদের কালো থাবা থেকে বাদ যায়নি ক্রীড়াঙ্গণও।
২০০৯ সালে ৩রা মার্চ ক্রিকেট বিশ্ব সাক্ষী হয় ভয়াবহ নির্মমতার। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের অদূরেই হামলা করা হয় লঙ্কাণ টিম বাসে। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান সামারাভিরা-সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনেরা। সেই থেকে স্বাগতিক হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বে নির্বাসনে পাকিস্তান।
এরপর থেকে নিজেদের নিরাপদ প্রমাণে গেল কয়েক বছর ধরেই আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটি। যে তালিকায় মোটা অর্থের লোভ দেখিয়ে নিদারুণ অর্থিক সংকটে ভোগা, জিম্বাবুয়ে-ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর শ্রীলঙ্কাকে পাকিস্তান সফরে একরকম বাধ্য-ই করে পিসিবি। অবশ্য তাতে ছিলো না কোন দেশেরই তারকা ক্রিকেটাররা। আর খেলা ছাঁপিয়ে সেখানে বড় হয়ে ওঠে নিরাপত্তা ইস্যু।
পাকিস্তানের সম্ভাব্য এই সফরের তালিকায় আছে বাংলাদেশেরও নাম। ২০১২ সালে যা গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। সেবার ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েনি পিসিবি। এফটিপি অনুসারে ২০২০ এর জানুয়ারিতে, বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজটি তারা আয়োজন করতে চায় ঘরের মাঠে।
বিসিবি কর্তাদের কথায়ও এখন স্পষ্ট, টাগারদের এ সফরে পাঠাতে আপত্তি নেই তাদেরও। তাইতো প্রশ্ন ওঠে কার স্বার্থ হসিলে, ক্রিকেট বোর্ডের এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কেন শঙ্কার মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে সেই সব সূর্য সন্তানদের, যারা হাসি ফোটায় কোটি বাঙ্গালির মুখে। দলমত নির্বিশেষে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয় সবাইকে। আর শেষ পর্যন্ত এ সফরে যদি ঘটে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা, সে দায়টা নেবে তো বিসিবি? প্রশ্নটা তোলাই রইলো।