রাজাকারের তালিকায় নিজের নাম দেখে ব্যথিত ও মর্মাহত হয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। সদ্য প্রকাশিত তালিকাটি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অন্যভাবে এই সমস্যার সমাধান না হলে, আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নেব। সারা জীবন দেশের জন্য, মানুষের জন্য লড়াই করেছি। আমাকে এভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার কোনো অধিকার নেই রাষ্ট্রের।
রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস বাহিনীর ১০ হাজার ৭৮৯ সদস্যের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যাচাই-বাছাই করে প্রথম ধাপে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দেশদ্রোহীদের তালিকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু, বরিশালের বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তীর বাবা মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী ও ঠাকুমা উষা রানি চক্রবর্তী, রাজশাহী এলাকার- অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম ও অ্যাডভোকেট মহসীন সহ আরও অনেকের নাম আছে।
টিপু বলেন, সারাজীবন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য লড়াই করে কাটিয়ে দিলাম। আজ এমন অভিযোগ পেলাম। এতে আমি স্তম্ভিত ও বিস্মিত। আমি এ বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছি, কোনো ভাবেই এটি প্রশ্রয় দিতে চাই না। এক্ষেত্রে আমি কোনো দুর্বলতা দেখাতে চাই না।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের যেভাবে কাজ করার কথা, সেই অনুযায়ী করতে পারছে না। আমার কাছে সেটাই মনে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক যদি গোলাম আরিফ টিপু, আব্দুস সালাম ভাই, মহসিন ভাইকে রাজাকার বানিয়ে দেয়, তাহলে কার কাছে কী বলব! অথচ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মূল শক্তি আমরাই। ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি। আর সেই আমাকেই কি না আজ রাজাকার বানানো হলো?
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, অন্যভাবে এই সমাধান হলে ভালো। আর যদি না হয়, সে ক্ষেত্রে চিন্তা করেছি আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নেব। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা যে তালিকা করেছে, আমরা শুধু তা প্রকাশ করেছি বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারবেন না তিনি। এই প্রশ্নে আমরা রাষ্ট্রের অবস্থান দেখব।
মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজেরা কোনো তালিকা প্রস্তুত করিনি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা যে তালিকা করেছে, আমরা শুধু তা প্রকাশ করেছি। সেখানে কার নাম রয়েছে, আর কার নাম নেই, সেটা আমরা বলতে পারব না।
আরও পড়ুন : একনজরে রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা
তিনি বলেন, একই নাম অনেকেরই থাকতে পারে। আমরা নতুন কোনো তালিকা করিনি। সরকারি নথিতে যাদের নাম আছে তাদেরই নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। আর একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় আসবে কেন, এটা হতে পারে না। আর যদি আসেও সেটা পাক বাহিনীর ভুল।
মোজাম্মেল হক বলেন, যদি মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় এসে থাকে, তবে আমরা সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখব।