গত ৬০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে এশিয়ার সূর্যোদয়ের দেশ জাপান। শনিবার (১২ অক্টোবর) সকালে দেশটির মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানা ‘হাগিবিস’ নামে এই টাইফুনের প্রভাবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৭৪ জন নিহত ও আরও কমপক্ষে শতাধিক লোক নিখোঁজ রয়েছেন। যদিও এই মৃতের সংখ্যা খুব শিগগিরই আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে দেশটির আবহাওয়াবিদরা জানায়, শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়টি জাপানের কাছাকাছি আসার পর অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়লেও এখনো তা বেশ বিপজ্জনক অবস্থাতেই রয়েছে। ঝড়টি বর্তমানে ঘণ্টায় প্রায় ১৯৫ কিলোমিটার বেগে বইতে শুরু করেছে। যা মোট ৩টি আটলান্টিক হারিকেনের শক্তির সমান। ঘূর্ণিঝড়টির ফলে ইতোমধ্যে জাপানের প্রধান দ্বীপ হুনশুর এবং মধ্য-দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা প্রভাবিত হয়েছে।
এ দিকে পুলিশ সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমের দাবি, শনিবার সকালে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মধ্যাঞ্চলীয় চিবা প্রদেশের ইছিহারে একটি গাড়ি উল্টে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আর বাকিদের বন্যা কবলিত ও ভূমিধসের কারণে প্রাণহানি ঘটেছে। তাছাড়া চলতি দুর্যোগ মোকাবিলায় এরই মধ্যে প্রায় লক্ষাধিক লোক এই উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, বাতাসের প্রতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে ঝড়টি আজ মাঝরাতে টোকিওসহ জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভিন্ন অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। যদিও এই টাইফুনটির প্রভাবে প্রায় ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় বন্যার পূর্বাভাসও জানানো হয়েছে।
অপর দিকে প্রলয়ঙ্করী এই ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়ার আগেই দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল। যেখানে বলা হয়, ১৯৫৮ সালের পর জাপানে সর্বোচ্চ শক্তিশালী সুপার টাইফুন আঘাত হানতে যাচ্ছে।
এবারের এই ঝড়ের প্রভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় টোকিও ও এর আশপাশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে রাজধানী ও এর নিকটবর্তী বিমানবন্দরগুলোর সকল ফ্লাইট এবং টোকিও-নাগোয়া এবং ওসাকার মধ্যবর্তী রেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
একই সঙ্গে চিবা, কান্টো এবং টোকিও অঞ্চলের প্রায় ১০ হাজারের অধিক পরিবার এরই মধ্যে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া শনিবার থেকে দেশটিতে শুরু হওয়া রাগবি বিশ্বকাপও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
এর আগে ১৯৫৮ সালে দেশটিতে আঘাত হানা প্রলংকারি টাইফুনে প্রায় ১২শর অধিক লোকের মৃত্যু হয়েছিল। তীব্রতার দিক থেকে হাগিবিস তার সমকক্ষ হলেও হতাহতের দিক থেকে আগেরবারের তুলনায় অনেকটাই কম বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।