Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চুক্তি হলে ফেনী নদী থেকে আরও পানি পাবে ভারত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১০:২৯ AM
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১০:২৯ AM

bdmorning Image Preview


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে ফেনী নদীর উজানে দেশটিকে ১.৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের সম্মতি দেওয়া নিয়ে এখন বিভিন্ন মহলে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আন্তঃসীমান্ত নদী হিসেবে ভবিষ্যতে এ নদী থেকে আরও বেশি পানি পাবে ভারত। ফেনী নদীটি একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। সরকারি তথ্য অনুসারে এই নদীর উৎপত্তি খাগড়াছড়িতে এবং এর দৈর্ঘ্য ৮০ কিলোমিটার। উৎপত্তির পর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরেখা বরাবর ভাটিতে এ নদী বঙ্গোপসাগরে এসে পতিত হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনে এ নদী সম্পর্কে যে তথ্য আছে, তাতে এর দৈর্ঘ্য ১৪০ কিলোমিটার এবং দুই দেশের সীমান্তরেখায় এর অবস্থান ৯৪ কিলোমিটার; আর বাংলাদেশ অংশে ঢোকার পর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য ৪৬ কিলোমিটার।

গতকাল রবিবার বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এ নদীর পানিবণ্টনে দুই দেশের যে চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে, সেখানে এর অর্ধেক পানি দাবি করেছিল ভারত। তবে বাংলাদেশ বলছে, আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে এর ৬০ শতাংশ পানির অধিকার তাদের।

আবুল কালাম আজাদের করা ওই প্রতিবেদনে যৌথ নদী কমিশন সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অভিন্ন সাতটি নদীর পানিবণ্টনের চুক্তির মধ্যে ফেনী নদীর পানির ভাগাভাগির বিষয়টিও আছে।

যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশের সদস্য কেএম আনোয়ার হোসেন বলেন, ফেনী নদীর যে পানিবণ্টন চুক্তি সেটি এখনো প্রক্রিয়াধীন আছে। এর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই হচ্ছে এবং খুব শিগির ফেনী নদীর পানিবণ্টন চুক্তি হবে। সম্প্রতি তাদের ফেনী নদী থেকে প্রতিদিন যে ১.৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেটা শুধুই মানবিক কারণে, শহরে পানি সরবরাহের জন্য। চুক্তির সময় এই ১.৮২ কিউসেক পানি তাদের প্রাপ্য থেকে সমন্বয় করা হবে। আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে যে পানিবণ্টন চুক্তি, এটা আসলে তা নয়।

পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা ওয়ারপোর সাবেক মহাপরিচালক ম ইনামুল হক বলেন, ভারত ফেনী নদীর অর্ধেক পানি দাবি করেছিল। কিন্তু এ নদীর ৬০ ভাগ পানির অধিকার বাংলাদেশের।

এবার যে ফেনী নদীর পানি নিয়ে চুক্তি হলো, এ প্রসঙ্গে যৌথ নদী কমিশন সূত্র জানায়, ২০১০ সালে কমিশনের ৩৭তম বৈঠকে ত্রিপুরার সাবরুম শহরের মানুষের খাবার পানি সরবরাহের জন্য ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের সিদ্ধান্ত ছিল। ২০১২ সালে কারিগরি কমিটির বৈঠকে ৭টি শর্তসাপেক্ষে খাবার পানি সরবরাহের জন্য ‘লো লিফট’ পাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। গত আগস্টে ঢাকায় সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ এ প্রতিশ্রুতি রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ অক্টোবর ভারতে শীর্ষ বৈঠকে এ নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এবারের সমঝোতা অনুযায়ী ফেনী নদী থেকে প্রতিদিন ভারত প্রতিসেকেন্ডে ৫২ লিটার এবং দিনে প্রায় ৪৫ লাখ লিটার পানি তুলবে। সরকারিভাবে বলা হয়েছে মানবিক কারণে সাবরুমের পানি সংকট মেটাতে যে পানি দেওয়া হচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে মোট পানির সেটি মাত্র ০.২৩ শতাংশ। নদী কমিশন সূত্রে যানা যাচ্ছে, এবার ভারতকে ১.৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের সম্মতি দেওয়া হয়েছে সাতটি শর্তে।

শর্তগুলো হলো- লঞ্চিং অ্যাপ্রোচের প্রশস্ততা ৭.৬৫ মিটারের পরিবর্তে ৪.৫ মিটার হবে। পাম্পের বৈশিষ্ট্য চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশে তা সরবরাহ করতে হবে। পানি উত্তোলনের পরিমাণ ১.৮২ কিউসেকের বেশি হবে না, যা উভয় দেশের প্রকৌশলীরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। বাস্তবায়নের পর উভয় দেশের প্রকৌশলীদের দ্বারা পাম্পের সক্ষমতা যাচাই করা হবে। ত্রিপুরার সাবরুম শহরে ১.৮২ কিউসেক পানি সরবরাহ পাইপ একটির বেশি হবে না। ইনটেক ওয়েলের (কূপ) অবস্থান যৌথভাবে উভয় দেশের প্রধান প্রকৌশলীরা নির্ধারণ করবেন। ইনটেক ওয়েলের বিপরীতে ফেনী নদীর বাংলাদেশের দিকে ভাঙন দেখা দিলে ভারতীয় পক্ষ ওই অংশের নদীতীর সংরক্ষণমূলক কাজ বাস্তবায়ন করবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথানুযায়ী, ফেনী নদীতে বর্ষা মৌসুমে ৮-১০ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে এ পানির প্রবাহ থাকে সর্বোচ্চ ৫০ কিউসেক। অবশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ড যেখানে পানি পরিমাপ করে, ভারত তার ৫ কিলোমিটার উজানে পানি পরিমাপ করে থাকে। তাই যৌথ নদী কমিশনে ভারতীয় তথ্য অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে ফেনী নদীতে প্রবাহ থাকে ১০৯ কিউসেক।

কেএম আনোয়ার বলেন, পানিপ্রবাহের যে ফিগারটা তারা বলছে এবং আমাদের হাতে আছে, সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে। এটা নিয়ে আমরা একটা কমিটি অচিরেই মিটিং করতে যাচ্ছি। সেখানে এগুলো ফাইনাল করতে পারব।

এদিকে ফেনী নদীতে চুক্তি ছাড়াই পাম্প বসিয়ে পানি তোলার অভিযোগ আছে। উজানে ১.৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার হলে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে কিনা সে প্রশ্নের চেয়ে স্থানীয় মানুষের কাছে বিদ্যমান ভারতীয় পাম্পগুলো নিয়েই প্রশ্ন বেশি। ফেনীর রামগড় এলাকায় গিয়ে নদীর তীরে ভারতীয় অংশে এ রকম পানির পাইপ এবং পাম্প মেশিনের অস্তিত্ব দেখা গেছে। স্থানীয়রা নদীতে একটি পাইপলাইন এবং তার পাম্পঘর দেখিয়ে বলেন, ২০০২ সাল থেকে এখান থেকে পানি তুলছে ভারত। বিজিবির পক্ষ থেকে এ নিয়ে প্রতিবাদও করা হয়েছে।

রামগড়ে অবস্থিত ৪৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারিকুল হাকিম বলেন, সীমান্তে ৩৬টি এ রকম পাম্প মেশিন দিয়ে পানি তুলছে ভারত। নো ম্যান্স ল্যান্ড থেকে এগুলো সরিয়ে নিতে বিএসএফের সঙ্গে বৈঠকে তাগাদা দেওয়া হলেও জানানো হয়েছে, এটি তাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়।

এ বিষয়ে ওয়ারপোর সাবেক মহাপরিচালক ম ইনামুল হক বলেন, ১.৮২ কিউসেক পানি দেওয়ার যে চুক্তি হয়েছে, সেটা তেমন কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু এখনই যে পাম্পগুলো ভারতের অংশে বসানো আছে তার প্রতিটির ন্যূনতম পানি তোলার ক্ষমতা দুই কিউসেক। ২০ বছর আগে ফেনী নদীতে শুষ্ক মৌসুমে ১২০ কিউসেক পানির প্রবাহ ছিল। সেটা এখন ৫০ কিউসেকে নেমে এসেছে। এর কারণ তারা উজানে পাম্প দিয়ে পানি প্রত্যাহার করছে।

যদি এখন ১.৮২ কিউসেক নেওয়া হয়, তা হলে অন্যান্য যে ৩৬টি পাম্পে তারা পানি ওঠাচ্ছে তার কী হবেÑ এমন প্রশ্নে কেএম আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে অফিশিয়ালি কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তারা যদি পানি তুলে থাকে সেটা হতে পারে। আমরাও আমাদের অংশে প্রয়োজনে পানি তুলে থাকি। এটা ঠিক একতরফা না। উভয়ের প্রয়োজনে উভয়ে তুলে থাকে। এটা চুক্তিবহির্ভূত যেসব নদী আছে, সেখানে হয়েই থাকে। সাতটি আন্তঃসীমান্ত নদীর যে পানিবণ্টন চুক্তি হতে যাচ্ছে তখন এগুলো সমাধান হয়ে যাবে।

Bootstrap Image Preview