Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আবরারকে হত্যার সেই কক্ষে নিয়মিত মদের আসর বসতো

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৩০ PM
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:৩০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে যে কক্ষে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, সে কক্ষে নিয়মিত মদের আসর বসত বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, ২০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতবা রাফিদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ ওরফে সকাল ও প্রত্যয় মুবিন।

ওই হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ওই রুমে সবসময় মদপান চলত। রাতে মদ খেয়ে চিৎকার-চেচামেচি করতেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের কেউ কিছু বলতে গেলে গালাগাল করতেন। আশপাশের রুমে যারা থাকে তারা ভালোভাবে ঘুমাতে পারত না।

সোমবার সকালে পুলিশ ওই কক্ষে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি মদের বোতল উদ্ধার করে। একই সঙ্গে ক্রিকেট খেলার পাঁচ-ছয়টি স্টাম্পও উদ্ধার করে।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিন মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, শক্ত লাঠি দিয়ে আঘাতের ফলে বাংলাদেশ আবরারের মৃত্যু হয়েছে।

ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি আবরারের মাথা, পায়ে ও হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শক্ত লাঠি দ্বারা আঘাতের ফলে তার মৃত্যু হয়। এক কথায় তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে, গতকাল রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে এনে জেরা করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। তারা শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদকে বেধড়ক পেটান। ওই সময় বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতবা রাফিদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন।

পরে ওই কক্ষে দ্বিতীয় দফা আবরারকে পেটানো হয়। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। রাত ৩টার দিকে আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন বুয়েটের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মো. মাশুক এলাহী।

মারধরের সময় ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত ৮টার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইল ফোনে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেজে তার লাইক দেওয়ার প্রমাণ পাই। সে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই। আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বুয়েট ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল ও উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা। প্রমাণ পাওয়ার পর চতুর্থ বর্ষের ভাইদের খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার সেখানে আসেন। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো ওরা মারধর করে থাকতে পারে। পরে রাত ৩টার দিকে শুনি আবরার মারা গেছে।

বুয়েটের শেরেবাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমরা সিসিটিভির ফুটেজ দেখছি। ঘটনায় কারা জড়িত, তা শনাক্ত করা হচ্ছে।

এঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল এবং সহ সভাপতি মুস্তাকিম ফুয়াদসহ ৯ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

Bootstrap Image Preview