Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে কারণে ব্যর্থ হলো চাঁদের বুকে ভারতের অবতরণ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৩ PM
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৩ PM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী ছবি


নির্ধারিত সময় মেনেই চন্দ্রপৃষ্ঠের দিকে আগালেও শেষমুহুর্তে ‘চন্দ্রযান-২’ এর ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একেবারে শেষ মুহূর্তে ইতিহাস গড়ার স্বপ্নভঙ্গ হয় ভারতের। অনেকেই এটিকে ভারতের ব্যর্থ অভিযান বলে মন্তব্য করছেন। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের মাটিতে নামতে গিয়ে অবতরণকারী যানের সাথে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে পুরো অভিযানটি ব্যর্থ হয়েছে। খবর: বিবিসি 

কলকাতার বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের সাবেক প্রধান ও মহাকাশবিদ ড. বি.পি.দুয়ারি বিবিসিকে বলেন, চাঁদ প্রদক্ষিণকারী মহাকাশযান, যার নাম চন্দ্রযান-২, সেটি কিন্তু এখনও চাঁদকে ঘিরে ঘুরছে। এই যানটি উড়ে যাওয়ার সময় একসময় জানাতে পারবে যে বিক্রমের ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছে।

তিনি বলেন, "এখন বিক্রমের অবস্থা কী, কিংবা কী ঘটেছে, সেটা এই মুহূর্তে কেউই বলতে পারছেন না। কারণ তার সঙ্গে কোনরকম বেতার যোগাযোগ আর করা যায়নি।"

"হয়তো যানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার যেসব অন-বোর্ড যন্ত্রপাতি আছে, কম্পিউটার আছে, সেগুলো হয়তো ঠিকমতো কাজ করেনি বলেই আর যোগযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ভারতের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইসরো-র প্রধান কে. সিভান বলেছেন, বিক্রমের নামার সময় যেসব ডেটা পাওয়া গেছে যেগুলো এখন বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।

চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণ করা হয় গত ২২শে জুলাই। এই রকেটের রয়েছে তিনটি ভাগ: একটি অরবিটার, অবতরণযান বিক্রম এবং প্রজ্ঞান নামে ছয়-চাকার একটি রোবট-চালিত গাড়ি। এর লক্ষ্য ছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করা।

এর আগে ভারত চন্দ্রযান-১ নামে একটি রকেট পাঠিয়েছিল যেটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে জলের কণার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিল। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আশা করছিলেন চন্দ্রযান-২ তাদের সেই আবিষ্কারকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে।

চাঁদের দক্ষিণ মেরু সূর্যের কাছ থেকে আড়াল থাকে বলে সেখানে তাপমাত্রা কম, এবং সেখানে জলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

যেভাবে বিচ্ছিন্ন হলো যোগাযোগ চন্দ্রযান-২ গত ২০শে অগাস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে।

শনিবার ভারতীয় সময় রাত একটায় প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে এটি অবতরণ শুরু করে।

মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইসরো এই 'সফট ল্যান্ডিং'-এর দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করতে শুরু করে।

টান টান উত্তেজনায় ভরা নিয়ন্ত্রণকক্ষের কাচের দেয়ালের ওপারে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

কিন্তু শেষ মুহূর্তে ২.১ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকার সময় মহাকাশযানের সঙ্গে ইসরো-র নিয়ন্ত্রণ কক্ষের বেতার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। স্তব্ধ হয়ে যান ইসরো'র বিজ্ঞানীরা।

অবতরণের ব্যর্থতার সম্ভাব্য কারণ অবতরণযান বিক্রম এবং নিয়ন্ত্রণকক্ষের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াকেই আপাতত প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছে ইসরো।

তারা বলছে, সব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের পরেই জানা যাবে বিক্রমের অবতরণে কেন সমস্যা হয়েছিল।

তবে এই ঘটনার পর জাতির উদ্দেশ্য দেয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন এই বলে যে অবতরণ যানটি সম্ভবত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দ্রুত গতিতে অবতরণের সময় চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ে।

"ইতিহাসবিদরা যদি আজকের দিনটির কথা লিখে রাখেন, তাহলে তারা নিশ্চিতভাবেই বলবেন যে সারাজীবন ধরে চাঁদের যে কল্পনা আমরা করেছি, তাতে অনুপ্রেরিত হয়ে চন্দ্রযান তার যাত্রার শেষ-ধাপে চাঁদকে আলিঙ্গন করতে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।"

ভীতিকর ১৫ মিনিট' ইসরোর-র প্রধান কে. সিভান এর আগে মহাকাশযানের চাঁদে অবতরণের চূড়ান্ত মুহূর্তকে 'ফিফটিন মিনিটস অফ টেরর' বা ভীতিকর ১৫ মিনিট বলে বর্ণনা করেছেন।

কারণ চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, তার ভূমির প্রকৃতি এবং ধুলো যে কোন অবতরণযানের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়।

এপর্যন্ত শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন সফলভাবে চাঁদের বুকে মহাকাশযান অবতরণ করাতে সমর্থ হয়েছে।

ইসরায়েল গত এপ্রিল মাসে 'বেরেশিট' নামে একটি মহাকাশযান চাঁদের বুকে নামানোর চেষ্টা করলেও সেটি ব্যর্থ হয়।

Bootstrap Image Preview