Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হংকংয়ে গণতন্ত্রকামীদের কাছেই ক্যারি ল্যামের নতি স্বীকার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:১৩ PM
আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:১৩ PM

bdmorning Image Preview


ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলের দেশ হংকংয়ে গণতন্ত্রকামীদের সরকার বিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনের পর অবশেষে বাতিল হলো বিতর্কিত আসামি প্রত্যর্পণ বিল। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দেশটির চীনপন্থি শাসক ক্যারি ল্যাম এক টেলিভিশন ভাষণে বিলটি বাতিলের ঘোষণা দেন।

'সাউথ চায়না পোস্ট' পত্রিকার বরাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম 'দ্য গার্ডিয়ান' জানায়, গত কয়েক মাসের টানা বিক্ষোভের মুখে সরকারের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম বিলটি প্রত্যাহারের আগে একই দিন স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় দেশটির আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মূলত সেখানেই সম্মতি পাওয়ার পর তিনি এই বিল প্রত্যাহারের ঘোষণাটি দেন। 

এ দিকে গত বুধবার এক টেলিভিশন ভাষণে ক্যারি ল্যাম বলেছেন, 'জনগণের উদ্বেগের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একমত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। এই বিক্ষোভে হংকংয়ের জনগণ দুঃখ পেয়েছে। যে কারণে বর্তমানে দেশ একটি চরম বিপদজনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সরকার বা সমাজের প্রতি যে অসন্তোষই থাকুক না কেন, সমাধানের পথ সহিংসতা হতে পারে না।'

ভাষণে ক্যারি ল্যাম আরও বলেন, 'বর্তমানে সহিংসতা বন্ধ করা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং সামাজিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সরকার সহিংসতা ও অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে কঠোর হবে।' তাছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি তিনি নিজেও বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের মাধ্যমে সরাসরি জনগণের সঙ্গে কথা বলে তাদের উদ্বেগ জানার চেষ্টা করবেন।'

অপর ক্যারি ল্যামের এই ঘোষণাকে ভুয়া এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণা বলে এরই মধ্যে অবহিত করেছেন গণতন্ত্রপন্থি রাজনীতিবিদ উই চি ওয়াই। তার মতে, 'আমরা অবশ্যই পুলিশি বর্বরতা থামাতে সক্ষম হবো। নয়তো বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।' তাছাড়া দেশটির গণতন্ত্রকামী অ্যাকটিভিস্ট জোসুয়া ওয়াং ধারাবাহিক টুইট বার্তায় বলেছেন, 'সব দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এই সরকার বিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।'

এর আগে গত ১৫ জুন হংকংবাসীর ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বিতর্কিত এই বিলটি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম। তবে কেবল স্থগিত নয়, বিলটি সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে পরবর্তীতে আন্দোলন শুরু করে দেশটির গণতন্ত্রকামী লাখো জনতা। মূলত এসবের প্রেক্ষিতে গত ৯ জুলাই বিলটি মৃত বলে দাবি করেন তিনি।

গণতন্ত্রকামীদের অভিযোগ, বেইজিংপন্থি এই শাসকের প্রস্তাবিত এই বিলে সন্দেহভাজন অপরাধীকে চীন এবং তাইওয়ানে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে দেশের আইনকে দুর্বল এবং মানবাধিকার হরণ হবে। তারা মনে করছেন, বিলটি পাস হলে তা হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পাবে। তাই দেশের স্বার্থে বিলটি পুরোপুরি বাতিল করাই সরকারের জন্য উত্তম।

প্রায় ১৫০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের অধীনে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অঞ্চলটি শক্তিশালী চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই দিবসটির ২২ বছর পূর্তিতে গত ১ জুলাই আন্দোলনে সড়ক অবরোধ করেন গণতন্ত্রকামী লোকজন। প্রতি বছরের এই দিনে কর্মকর্তারা এক দিকে সরকারি ভবনগুলোতে উৎসব পালন করেন আর অপর দিকে গণতন্ত্রকামীরা অবস্থান নেন রাজপথে।

দীর্ঘদিন যাবত হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল থেকে অঞ্চলটিকে স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দেয় দেশটি। এর আগে গত মাসেও চীনপন্থি এক বিল নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলের এই দেশ। 

মূলত চীন এবং তাইওয়ানে আসামি প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত একটি বিলের বিপক্ষে তখন গোটা দেশে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে আন্দোলনকারীদের মূল ক্ষোভ দাঁড়ায় চীনের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে।

বেইজিংয়ের দুর্বল আইন ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ডের কারণে হংকংয়ের সাধারণ মানুষ সেখানে কাউকে ফেরত পাঠাতে চাইছেন না। তাদের মতে, পার্লামেন্টে বিলটি পাস হলে তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে চীনা হস্তক্ষেপের সুযোগ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে।

Bootstrap Image Preview