Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১০ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রোহিঙ্গারা না ফেরায় বাংলাদেশকে দায়ী করে বেইজিংয়ে ছুটলেন মিয়ানমারের মন্ত্রী!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০১৯, ০৭:১৯ PM
আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০১৯, ০৭:১৯ PM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশের পূর্ণ প্রস্তুতি সত্ত্বেও গত ২২ আগস্ট একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরতে রাজি হয়নি। বাংলাদেশে চীন ও মিয়ানমার দূতাবাসের প্রতিনিধিরা কক্সবাজারে পুরো পরিস্থিতি দেখলেন। এর পরও মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসন শুরু করতে ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পাঠায় তাদের এক মন্ত্রীকে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, দৃশ্যত গত ২২ আগস্ট মিয়ানমারের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসন শুরু করার উদ্যোগ ছিল বৈশ্বিক চাপ কমানোর একটি চেষ্টা। আগামী মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এবং জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুসহ মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। তার আগে মিয়ানমার দেখানোর চেষ্টা করেছিল রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তারা আন্তরিক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কূটনীতিক গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, রোহিঙ্গারা কেন ফিরে যেতে চায় না সে বিষয়টি কক্সবাজারে তারা চীন ও মিয়ানমার দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সামনেই বলেছে। বাংলাদেশ যে প্রস্তুত ছিল তা চীনা দূতাবাসের প্রতিনিধিও দেখেছেন।

বেইজিংয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মন্ত্রী টিন্ট সোয়ে বেইজিং সফরে যান। গত মঙ্গলবার তিনি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি জাতিসংঘের আসন্ন অধিবেশনগুলোতে এই ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষে সমর্থন চেয়েছেন।

কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কিছু বিষয়ে চীনের নীতিগত অবস্থান এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারের পক্ষে যায়। যেমন রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত বলে চীন মনে করে। এ প্রক্রিয়ায় বাইরের, বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলের বাইরের কেউ যুক্ত হোক তা চীন চায় না। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অপরাধগুলোর বিচার নিয়ে বৈশ্বিক উদ্যোগগুলোও চীনের পছন্দ নয়।

জানা গেছে, মিয়ানমারের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর দেশের অনুসৃত এই নীতিগুলো আগামী দিনেও অনুসরণ করার কথা বলেছেন। অর্থাৎ রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে কথা বলবে চীন। এ ছাড়া মানবাধিকার পরিষদ, সাধারণ পরিষদসহ জাতিসংঘের অন্যান্য ফোরামে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বৈশ্বিক কোনো উদ্যোগকে চীন সমর্থন দেবে না এবং ভোটাভুটি হলে চীন তার বিরোধিতা করবে।

এদিকে মিয়ানমারের মন্ত্রীর সঙ্গে বেইজিংয়ে বৈঠকের পরদিনই চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের আগ্রহ প্রকাশ করে ঢাকায় কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা বলেছেন, গত জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের সময়ও চীনা নেতারা এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন।

ঢাকায় চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গত বুধবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করার পরপরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। গতকাল সকালে তিনি মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাব বিষয়ে জানতে চাইলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীন আরো গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। সম্ভাব্য উপায় কী হতে পারে সে বিষয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করছি।’

গতকাল বিকেলে ঢাকায় বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান—চীন এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, ‘চীন আমাদের বলেছে, এ ব্যাপারে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে আছে। চীন বলেছে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। দুই বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে সমস্যা কিভাবে সমাধান হবে সে বিষয়ে আমরা তৃতীয়পক্ষ হিসেবে আপনাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করব। তাদের রাষ্ট্রদূত এসেছেন এবং সেই কথাটিই বলেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারা (চীন) বলেছে, আমাদের সঙ্গে রাখেন। এই সমস্যা যাতে দূর হয় সে জন্য চীন আপনাদের সঙ্গে আছে।’

বৈঠকের তারিখ ঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তারিখ ঠিক করিনি। আমার সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত দেখা করেছেন। এখন তিনি মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ করবেন। তারপর আমাদের জানাবেন।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দুই বছর ধরে সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাঁকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মিয়ানমারের মন্ত্রীকে নিয়ে বৈঠক করে আসছেন। আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের আগেই বৈঠকে বসতে চায় মিয়ানমার। তবে কোনো কারণে সেই বৈঠক না হলে নিউ ইয়র্কে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে তিন দেশের বৈঠক হতে পারে। তবে মিয়ানমার রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ সৃষ্টি করার চেয়ে বৈঠকে বসাকেই যে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তা স্পষ্ট।

Bootstrap Image Preview