Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১১ শনিবার, মে ২০২৪ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

'এমনভাবে মেরেছে, যেন আমরা পশু'

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০১৯, ১১:৫২ AM
আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০১৯, ১১:৫২ AM

bdmorning Image Preview


ভারত সরকার সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে দেশটির সেনাদের অভিযানে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। কাশ্মীরিদেরকে লাঠি ও তার দিয়ে পেটানো হচ্ছে এবং বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হচ্ছে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভারত।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গণমাধ্যমটির প্রতিবেদক সামির হাশমি বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে গতকাল শুক্রবার কাশ্মীরিদের এমন নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন। তবে বিবিসির পক্ষ থেকে অভিযোগগুলো যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টিরও বেশি গ্রামে যান বিবিসির প্রতিবেদক। গ্রামগুলো কয়েক বছর ধরে ভারতবিরোধিতার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। রাতের আঁধারে ভারতীয় সেনাদের অভিযানে গ্রামগুলোতে ব্যাপক মারধর ও জুলুম নির্যাতন চলছে বলে জানান তিনি।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ভয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে ওই গ্রামগুলোর বহু বাসিন্দার গায়ে ভারতীয় সেনা সদস্যদের নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।

ভুক্তভোগী গ্রামের অনেক মানুষ জানায়, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকেই সেনারা বাড়ি বাড়ি ঢুকতে শুরু করে।

একটি গ্রামের লোকজন জানায়, ওই গ্রামের দুই ভাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বাড়ির আঙিনায় নিয়ে ব্যাপক মারধর করে ভারতীয় সেনারা। অপরাধ কী জানতে চাইলে তাতেও কর্ণপাত না করে সেনারা তাদেরকে বেদম পেটাতে থাকে।

তবে এমন অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন এবং অবাস্তব’ বলে জানিয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল আমান আনন্দ।

আরেকটি গ্রামের ২০ বছর বয়সী এক যুবক জানান, ভারতীয় সেনারা তাকে সশস্ত্র যোদ্ধাদের সম্পর্কে গোপনে তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় ওই যুবককে এমনভাবে পেটানো হয়েছে যে, এখন তিনি পিঠে ভর করে শুয়ে থাকতেও পারছেন না।

ওই যুবক আরও বলেন, ‘এমন চলতে থাকলে ঘরবাড়ি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আমার সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। তারা আমাদেরকে এমনভাবে মেরেছে, যেন আমরা পশু। তারা আমাদেরকে মানুষ মনে করে না।’

ভুক্তভোগী আরও এক ব্যক্তি বিবিসির এই প্রতিবেদককে নির্যাতনের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় সেনারা আমার দাড়ি উপড়ে ফেলে। তখন মনে হচ্ছিল, আমার দাঁতগুলো সব পড়ে যাচ্ছে।’

আরেকটি গ্রামের এক যুবক বলেন, ‘তারা আমার শরীরের সব জায়গায় পিটিয়েছে। আমাদেরকে লাথি মেরেছে, লাঠি ও তার দিয়ে পিটিয়েছে, বিদ্যুতের শক দিয়েছে। পায়ের পেছন দিকে পিটিয়েছে। এমনকি পেটানোর সময় মুখে কাদামাটি পুরে দিয়েছে, যাতে আমরা চিৎকার করতে না পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদেরকে বলেছি, আমরা নির্দোষ। আমরা জানতে চেয়েছি, আমাদের সঙ্গে কেন এমন করা হচ্ছে। তারা কিছুই শোনেনি। আমি একপর্যায়ে বলেছি, পেটাবেন না, বরং আমাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলুন। আমি আল্লাহর কাছে মৃত্যু চাইছিলাম, কারণ নির্যাতনটা অসহনীয় মাত্রার ছিল।’

তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। বিবিসিকে দেওয়া তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পেশাদার সংস্থা হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনী মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এসব অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করবে।

বিবৃতিতে জানানো হয়, গত পাঁচ বছরে ভারতীয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের করা এমন ৩৭টি অভিযোগের ২০টিই ছিল ভিত্তিহীন। আর ১৫টির তদন্ত করা হলেও মাত্র তিনটি ঘটনায় অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হয়।

গত ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে দ্বিখণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। রাজ্যটিকে দ্বিখণ্ডিত করে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সৃষ্টির সিদ্ধান্ত হয়। 

এরপর থেকেই সেখানে এক ‘ভয়ংকর’ অবস্থা বিরাজ করছে। বিপুল সংখ্যক বাড়তি সেনা মোতায়েনের ফলে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী থেকে শুরু করে প্রায় তিন হাজারের মতো কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তার করে বন্দী করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা।

Bootstrap Image Preview