Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নারীরা কেন হজে যাবে, গুরুত্ব কী, অধিকার কতটুকু?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০১৯, ১০:৪৮ PM
আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০১৯, ১০:৪৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


হজ নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ফরজ। তবে নারীর হজ পুরুষের হজ থেকে ভিন্ন ভাব ও উপলব্ধির ধারক। কেননা নারীর হজ হাদিস অনুযায়ী জিহাদ তুল্য (দ্র: বুখারি : ১৫২০)। পক্ষান্তরে পুরুষের হজ কেবলই হজ। হজ পালনে নারীর অধিকার পুরুষের থেকে কোনো অংশেই কম নয়, বিষয়টি শক্ত ভূমিতে দাঁড় করানোর জন্যই হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মহাতুল মুমিনিন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আদায় করেছেন বিদায় হজ। 

শুধু তাই নয়, হজ কর্মে বরং জড়িয়ে রয়েছে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থী নারীর ঈমান-বিধৌত স্মৃতি যা সাফা-মারওয়ার সাঈর আকারে আল্লাহর জিকিরের উদ্দেশে আদায় করতে হয় নারী-পুরুষ সকলকে সমানভাবে।

নারীর প্রকৃতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। সে হিসেবে হজ পালন অবস্থায় নারীর আচার-অবস্থা-আচরণের কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেয়া হয়েছে বিশেষ কিছু দিকনির্দেশনা। হজ বিষয়ে সামগ্রিক ধারণা অর্জনের সাথে সাথে হজ পালনকারী নারীকে এ সব বিষয়ে সম্যক ধারণা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। 

মহিলাদের হজের গুরুত্ব: 

মহিলাদের হজের গুরুত্ব পুরুষদের থেকে আলাদা। কারণ তা তাদের জন্য জিহাদের সমতুল্য। হাদিসে এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো দেখছি জিহাদই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল, তাহলে আমরা (নারীরা) জিহাদ করব না কেন? রাসূলল্লাহ উত্তরে বললেন: “তোমাদের জন্য মাবরুর হজই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ জিহাদ”।[৯]

এ হাদিস থেকে আমরা মহিলাদের জন্য হজের আলাদা গুরুত্ব বুঝতে পারি। এটি ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হওয়ার পাশাপাশি মহিলাদের জন্য জিহাদ। সুতরাং যে মহিলা হজের জন্য বের হয়েছেন সে হাজী সাহেবাকে আমরা আমাদের অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ এমন অনেক মহিলা আছে যাদের ওপর হজ ফরজ হয়েছে অথচ তারা তা জানে না।

আবার এমন অনেক মহিলাও আছেন যাদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার পরে তা করতে গড়িমসি করতে করতে অপারগ অবস্থায় উপনীত হয়েছে। এরা অবশ্যই গুনাহ্‌গার হবে। আপনাকে আল্লাহ তার আনুগত্যের জন্য বাছাই করে নিয়েছেন সে জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন এবং বলুন: আল-হাম-দু-লিল্লাহ।

নারীদের জন্য সক্ষমতা তিন ধরনের: আর্থিক সক্ষমতা, শারীরিক সক্ষমতা ও মাহরাম সাথে থাকা।

সুতরাং যদি কোন মহিলা আর্থিক ও শারীরিক ক্ষমতাসম্পন্ন হয় এবং মাহরাম পাওয়া যায় তবে তার উপর হজ ফরজ হবে। কিন্তু যদি শুধু আর্থিক ক্ষমতা থাকে তবে মহিলার উপর হজ ফরজ হবে, তিনি নিজে না গেলে কাউকে তার পরিবর্তে হজে পাঠাতে হবে।

আর যদি শুধু শারীরিক ক্ষমতা থাকে তবে তার জন্য হজ ফরজ নয়। কিন্তু যদি তিনি কোনভাবে হজে গমন করেন তবে তার হজ হয়ে যাবে। মুহরিম সাথে না থাকলে সেজন্য গুনাহ্‌গার হবে।

স্বামীর অনুমতি: 

(ক) যদি আপনার হজটি ফরজ হজ হয়ে থাকে তবে স্বামীর অনুমতি নেয়া আপনার জন্য মুস্তাহাব। যদি স্বামী অনুমতি দেন তবে ভাল। আর যদি অনুমতি না দেন তারপরও যদি আপনি মুহরিম সাথি পান তবে আপনাকে হজ করতে হবে। কোন স্বামীর জন্য আপন স্ত্রীকে ফরজ হজ আদায় করতে বাধা দেয়া উচিত হবে না।

হ্যাঁ, এ ব্যাপারে স্ত্রীর নিরাপত্তা ও অন্যান্য যাবতীয় শর্তাদি পূরণ হয়েছে কি না তা দেখাও স্বামীর কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কারণ, সক্ষম হলেই দেরি না করে হজ আদায় করে নেয়া উচিত। নচেৎ যদি বাধা দেয়ার কারণে স্ত্রী কোন কারণে পরবর্তীতে অপারগ হয়ে পড়ে তবে স্বামী সহ তারা উভয়ই গুনাহ্‌গার হবে।

আর যদি আপনার হজটি নফল হজ হয়ে থাকে তবে স্বামীর অনুমতি নেয়া আপনার জন্য ফরজ। স্বামীর অনুমতি ব্যতীত আপনি হজে যেতে পারবেন না। অনুরূপভাবে, স্বামীও আপনাকে নফল হজে গমনের ক্ষেত্রে তার অধিকারের কথা বিবেচনায় রেখে বাধা দেয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।

আর যদি কোন মহিলা স্বামীর মৃত্যুজনিত ইদ্দত পালন অবস্থায় থাকে তাহলে সে মহিলা ইদ্দতের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত হজে যেতে পারবে না। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে নবী! তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রী গণকে তালাক দিতে ইচ্ছে কর তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং তোমরা ইদ্দতের হিসেব রেখো এবং তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিষ্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয়।”[১০]

(খ) কোন পিতা বা মাতা কেউই তাদের মেয়ে সন্তানকে ফরজ হজে গমন করতে বাধা দেয়ার অধিকার রাখে না। যদি কোন মেয়ে হজে যাওয়ার সামর্থ্য থাকে এবং মাহরাম পায় তখন তার জন্য পিতা-মাতার আনুগত্যের দোহাই দিয়ে হজে যাওয়া থেকে বিরত থাকা বৈধ নয়।

মাহরাম থাকা: 

মহিলাদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে, মাহরাম থাকা। কেননা; কোন মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের একাকী সফর করা জায়েয নয়। এ ব্যাপারে যুবা-বৃদ্ধা, সুন্দরী-কুশ্রী, চাই সে সফর উড়োজাহাজে হোক অথবা গাড়ি-রেলগাড়ি যেটাই হোক সর্বাবস্থায় মাহরাম থাকা বাধ্যতামূলক।

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “কোন মহিলা মাহরাম ছাড়া যেন সফর না করে, অনুরূপভাবে কোন মাহরাম এর উপস্থিতি ছাড়া কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার ঘরে প্রবেশ না করে” এ কথা শোনার পর এক ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক যুদ্ধে যেতে চাই অথচ আমার স্ত্রী হজে যেতে চায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তুমি তার সাথে বের হও”।[১১]
 

Bootstrap Image Preview