বরগুনায় রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের মা সাহিদা অনেকটা আত্মগোপনে ছিলেন। এরই মধ্যে তাকে উদ্ধৃত করে অনলাইন পোর্টালে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। সেখানে নয়নের গডফাদারের নাম প্রকাশ করা হয়। পরে বরগুনার সংবাদকর্মীরা নয়নের মাকে খুঁজে বের করেন।
প্রথম দিকে তিনি নয়নের ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেননি। কিন্তু হঠাৎ করেই নয়নের মা দুটি ঘটনার জন্য মিন্নিকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন। বলেন, মিন্নির ব্যবহারের অনেক কিছু তার ঘরে রয়েছে।
নয়ন বন্ডের মায়ের বক্তব্যের সূত্র ধরেই রিফাতের বাবা মিন্নির বিরুদ্ধে খুনের ঘটনার সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলেন।
শনিবার রাতে রিফাতের বাবা বরগুনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মিন্নির গ্রেপ্তার দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করেন, এ হত্যার সঙ্গে মিন্নি জড়িত। কারণ হিসেবে তিনি সংবাদ সম্মেলনে নয়ন বন্ডের মায়ের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দেন। ওই সংবাদ সম্মেলনের আগে ও পরে প্রেস ক্লাবে এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথের উপস্থিতি আলোচনার জন্ম দেয়।
সংবাদ সম্মেলনের পরের দিন রোববার রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় স্ত্রী মিন্নির গ্রেপ্তারের দাবিতে বরগুনা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে স্থানীয় সাংসদের ছেলে ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সুনাম দেবনাথ বক্তব্য দেন। ‘বরগুনার সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে সুনামের অনুসারীরা অংশ নেয়। মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, রিফাত হত্যায় তার স্ত্রী মিন্নি জড়িত। তাকে গ্রেপ্তারের দাবি করেন তারা।
ওই ঘটনার পর রোববার দুপুরে মিন্নি তার বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, যারা বরগুনায় ‘বন্ড ০০৭’ নামে সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি করিয়েছিলেন, তারা খুবই ক্ষমতাবান এবং অর্থবিত্তশালী। নেপথ্যের এই ক্ষমতাবানরা বিচারের আওতা থেকে দূরে থাকার জন্য হত্যা মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তার শ্বশুরের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন।
এরপর মঙ্গলবার আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনা শহরের দক্ষিণ মাইঠা এলাকার বাড়ি থেকে পুলিশ লাইনসে আনা হয়। তারপর প্রায় ১২ ঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা সাতজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
এ মামলায় মিন্নিসহ এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোরে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিনজনসহ সাত আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।