Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘মন্ত্রী-এমপিসহ প্রত্যেক পুরুষ আমাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক চায়’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫৪ PM
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


আফগানিস্তানের সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলপাড় ফেলে দিয়েছে দেশটিতে। কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করলেও ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানে নারীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে যৌন অবমাননার চর্চার বিবরণ।

কাবুলকে ঘিরে থাকা পার্বত্য এলাকার পাদদেশের কাছাকাছি একটি বাড়িতে সাবেক একজন সরকারি চাকুরে নারী বাস করেন। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন সেই নারী, কিন্তু পুরো বিশ্ব তার নির্যাতনের খবর জানুক- সেটাই চান তিনি।

ওই নারী জানান, তার সাবেক বস যিনি সরকারের একজন সিনিয়র মন্ত্রী, বারবার তাকে যৌন হয়রানি করেছেন এবং একদিন যখন তিনি নিজের অফিসে যান, তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণের চেষ্টা করেন।

তার কথায়, ‘তিনি সরাসরি আমাকে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বলেন। আমি তাকে বললাম আমি যোগ্য এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। আমি কখনো ভাবতে পারিনি আপনি আমাকে এই ধরনের কোনো কথা বলতে পারেন! আমি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াই।’ তবে এরপরও জোর খাটানোর চেষ্টা করা হয় তার সঙ্গে।

এই ঘটনার পর তিনি কী কোনও অভিযোগ দায়ের করেছিলেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘না, আমি কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম। আমি সরকারকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। যদি আপনি কোর্ট বা পুলিশের শরণাপন্ন হন, তাহলে দেখতে পারবেন তারা কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত। আপনি অভিযোগ করে দাঁড়ানোর মত কোনো নিরাপদ জায়গা খুঁজে পাবেন না। আপনি যদি মুখ খোলেন তাহলে মেয়েটিকেই সবাই দোষারোপ করবে।’

সাবেক এই সরকারি কর্মী জানান, আরও দুজন নারী তাকে বলেছেন যে ওই একই মন্ত্রী তাদেরকে ধর্ষণ করেছেন। তিনি এসব করেছেন নির্লজ্জভাবে, কোনো ধরনের ভয় ছাড়াই কারণ তিনি সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।’

নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ দেশগুলোর তালিকায় আফগানিস্তান ধারাবাহিকভাবে তার অবস্থান ধরে রেখছে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘের প্রকাশিত এক রিপোর্টে বিস্তারিত উঠে আসে যে কিভাবে যৌন অপরাধ এবং নির্যাতনের শিকার নারীদের তাদের অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। অনেক ঘটনার ক্ষেত্রে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া অপরাধের জন্য তাদেরকেই দোষারোপ করা হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা সংঘটিত যৌন অসদাচরণের ঘটনার খবর প্রকাশ করা সহজ নয়। সেই কারণে যে ছয়জন নারীর সঙ্গে বিবিসি কথা বলেছে তারা অধিকাংশই পরিচয় প্রকাশে ভীষণ ভীত ছিলেন।

কিন্তু তাদের সঙ্গে আলাপে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, যৌন হয়রানি আফগান সরকারের ভেতরের একটি সমস্যা যেটি কোনও একজন ব্যক্তি একটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।

অন্য একজন নারী কর্মী নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা শেয়ার করতে রাজি হন। সরকারি চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছিলেন তিনি এবং সব যোগ্যতা ছিল তার। কিন্তু তাকে বলা হল তাকে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর সঙ্গে দেখা করতে হবে।

তিনি জানান, ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাকে ছবিতে দেখা যায়। তিনি আমাকে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে যেতে বলেন। তিনি বলেন, আসো এবং বসো, আমি তোমার সব কাগজপত্র অনুমোদন করে দেব। তিনি আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসেন এবং এরপর বলেন, এবার কিছু পান করা যাক এবং বিছানায় যাওয়া যাক’।

ওই নারী জানান, ‘আমার কাছে দুটো পথ খোলা ছিল, এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া অথবা ছেড়ে দেওয়া এবং আমি যদি তা গ্রহণ করতাম তারপর এটা শুধুমাত্র ওই ব্যক্তির মধ্যেই থেমে থাকত না, বরং আরও অনেক পুরুষ আমাকে তাদের শয্যাসঙ্গী হওয়ার জন্য বলত। এটা সত্যিই জঘন্য। আমি আতঙ্কিত হলাম এবং সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম।’

ওই নারী জানান, তিনি সরকারি দপ্তরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে বলা হয়েছিল: ‘ভাবুন আপনি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রেখেছেন এবং তা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এইসব বিষয় আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। আপনি ধীরে ধীরে ক্রুদ্ধ এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। আপনি যদি অভিযোগ নিয়ে একজন বিচারক, পুলিশ, কৌঁসুলি বা এদের যে কারও কাছে যান, তারাও আপনাকে শয্যাসঙ্গী হতে বলবে। এমন যদি তারাও করে তাহলে কার কাছে যাবেন? এটা এখন যেন সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে আশেপাশের সব পুরুষই আপনার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়।’

এসব ঘটনার খবর হয় না-বলা রয়ে গেছে কিংবা কোথাও এ নিয়ে ফিসফাস শোনা গেলেও তা ধামাচাপা পড়ে গেছে যতক্ষণ পর্যন্ত না গত মে মাসে, প্রেসিডেন্টের সাবেক একজন উপদেষ্টা জেনারেল হাবিবুল্লাহ আহমেদযাই এ বিষয়ে মুখ খোলেন। প্রেসিডেন্টের একসময়কার এই উপদেষ্টা রাজনৈতিক বিরোধীতে পরিণত হওয়ার পর আফগান নিউজ চ্যানেলে সাক্ষাতকার প্রদানের সময় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

তিনি শীর্ষ কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবীদদের বিরুদ্ধে পতিতাবৃত্তির প্রচার চালানোর অভিযোগ করেন। প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সাক্ষাতকারের অনুরোধ জানানো হলেও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং ইমেইলে প্রশ্ন পাঠানো হলে তার কোনো প্রতিউত্তর মেলেনি।

তারা জেনারেল আহমাদযাইয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এর আগে দেয়া বিবৃতি দেখে নিতে বলে যেখানে তার এসব অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা হিসেবে দাবি করে। নিজের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা বলেছে বলে দাবি করে তারা।

Bootstrap Image Preview