Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পরমাণু সমঝোতা রক্ষা: দ্রুত ফুরিয়ে আসছে ইউরোপের সময়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০১৯, ০৩:৩৮ PM
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৯, ০৩:৩৮ PM

bdmorning Image Preview


পরমাণু সমঝোতা মেনে চলতে ইরানের পক্ষ থেকে ইউরোপকে দেয়া চূড়ান্ত সময়সীমা শেষ হওয়ার চারদিন আগে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ সমঝোতার আরো কিছু ধারার বাস্তবায়ন স্থগিত রাখার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন।

২০১৯ সালের ৮ মে ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার অন্যায়ভাবে বেরিয়ে যাওয়ার এক বছর পূর্তিতে ইরান এ সমঝোতায় নিজের দেয়া দু’টি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন স্থগিত করে দেয়। ওই দুই প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও ভারী পানি বিদেশে রপ্তানি করা। একই দিন ইরান ইউরোপকে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য ৬০ দিনের চূড়ান্ত সময়সীমা বেধে দেয়। আগামী ৭ জুলাই সে সময়সীমা শেষ হতে যাচ্ছে এবং এর মধ্যে ইউরোপ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হলে তেহরান কঠোরভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

প্রেসিডেন্ট রুহানি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইউরোপকে উদ্দেশ করে বলেন, ৭ জুলাই থেকে ইরান আর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ৩.৬৭ মাত্রার সীমাবদ্ধতা মেনে চলবে না বরং তেহরান তার প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে ইউরোপ নিজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হলে ‘আরাক’ ভারী পানির চুল্লিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হবে। পরমাণু সমঝোতা স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে প্লুটোনিয়াম উৎপাদনক্ষম এই চুল্লিকে ইউরোপীয়রা বিপজ্জনক বলে অভিহিত করত।

আমেরিকা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ইরান এক বছর কৌশলগত কারণে ও সদিচ্ছার মনোভাব প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে এটি থেকে বেরিয়ে যায়নি। কিন্তু এক বছর পার হওয়ার পর এখন ইরান পরমাণু সমঝোতারই ২৬ ও ৩৬ নম্বর ধারা অনুসরণ করে এটির কিছু কিছু ধারার বাস্তবায়ন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  ওই দুই ধারায় বলা হয়েছে, এ সমঝোতার এক পক্ষ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে অন্য পক্ষ তার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন স্থগিত রাখতে পারবে।

ওই ধারাগুলো মেনে ইরান গত সোমবার নিজেদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ ৩০০ কেজির বেশি করার কথা ঘোষণা করে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ এ সম্পর্কে বলেন, পরমাণু সমঝোতার ৩৬ নম্বর ধারা মোতাবেক আমেরিকা এ সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ বাড়ানোর অধিকার রাখে।  

এ সম্পর্কে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সম্ভাব্য প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, ইরানের এ পদক্ষেপ পরমাণু সমঝোতার লঙ্ঘন নয় বরং এটি একট কারিগরি ইস্যু।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এ পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে ইউরোপকে এই বার্তা দিয়েছে যে, এখন থেকে তেহরান আর একতরফাভাবে পরমাণু সমঝোতা মেনে চলবে না বরং ইউরোপকেও এটি মেনে ইরানকে তার অধিকার কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে ইরান এখনো পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যায়নি বরং এটিরই ধারা অনুসরণ করে নিজের কোনো কোনো প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন স্থগিত রেখেছে মাত্র।

তাদের মতে, ইউরোপের পক্ষ থেকে গত এক বছর ধরে এ সমঝোতা রক্ষা করার ব্যাপারে যেসব গালভরা বুলি আওড়ানো হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি আর ইরানের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ইরান বাস্তবোচিত পদক্ষেপ চায়। পরমাণু সমঝোতায় ইরানকে যেসব আর্থিক সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলে তেহরান হয়তো পরবর্তীতে এ সমঝোতা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যাওয়ার কথাও বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।

Bootstrap Image Preview