শিক্ষকের ভূমিকায় তখন সহপাঠিদের পড়াচ্ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতি খাতুন। এ সময় শিক্ষিকা মৌসুমি আফরোজা দরজার পাশে চেয়ারে পা তুলে আরাম-আয়েশ করতে ব্যস্ত। এ পাশে ক্লাস চললেও তিনি কোন খেয়ালই রাখছেন না।
সোমবার (১৭ জুন) বেলা ১১টার সময় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলাধীন এনায়েতপুর থানার খুকণী ইউনিয়নের গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এমনি দায়সাড়া ক্লাস চলছিল। পাশের খোকশাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা এই শিক্ষিকা বেশ কয়েক বছর ধরে স্কুলটিতে চাকরিরত অবস্থায় কোন রকমে ক্লাস করিয়ে দিন পার করে বাড়ি ফিরে যায় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অতীত হতেই মেধার পরিচয় দিয়ে আসছে। তবে গত দুই-তিন বছর ধরে দুই-এক জন শিক্ষক পাঠদানে যথাযথ ভূমিকা পালন না করায় এর মান কিছুটা মলিন হয়েছে। গত বছর যেখানে সাড়ে ৩'শ এর মত ছাত্র-ছাত্রী ছিল। সেখানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১৪ জনে। স্কুলের বর্তমানে মোট শিক্ষক ৬ জন। এর মধ্যে নারী ৩ জন। এরা সবাই পাশ্ববর্তী এলাকার। নারী শিক্ষিকা মৌসুমি আফরোজা স্কুলে বেশ কয়েক বছর সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত।
তবে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানে যথাযথ ভাবে নিবেদিত নয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সেমাবার সকাল ১১টায় স্কুলটিতে দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাশ চলছিল। তখন তারই পড়ানোর কথা ছাত্র-ছাত্রীদের। কিছু দেখা যায় ব্যতিক্রম চিত্র। পরপর দুজন ছাত্রীকে দিয়ে তিনি ক্লাশ নেয়াচ্ছিলেন। আর শিক্ষিকা আফরোজা অমনোযোগী হয়ে ক্লাশের দরজার পাশে চেয়ারে পা তুলে বসে আরাম করছিলেন। আর এভাবেই তার পুরো ক্লাশ চলছিল। এক পর্যায়ে তিনি ক্লাশ রেখেই বাইরে বের হয়ে গেলে পাঠদানহীন হয়ে পড়ে ছাত্র-ছাত্রীরা। তাই বেকার বসে থাকে তারা।
বিষয়টি নিয়ে এলাকা জুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, শিক্ষকরা যথাসাধ্য দায়িত্ব পালন করলেও নারী শিক্ষিকারা মনোযোগী। স্কুলে পাঠদান ব্যতিরেখে মোবাইলে গল্প ও আয়েশ করে বাড়ি চলে যান। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের যথাযথ শিক্ষার প্রসার ঘঠছে না।
এ ব্যাপারে আয়েশী শিক্ষিকা মৌসুমী আফরোজা জানান, চৌকশ ছাত্রীদের দিয়ে ক্লাশ করানোর পাশাপাশি আমি অন্য মনষ্ক হওয়ায় এমনটা হয়েছে। তবে নিজে ক্লাশ নেননি কেন, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি।
বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক নুরল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এবারো আমাদের স্কুল থেকে প্রাথমিকে ১ জন বৃত্তি পেয়েছে। শিক্ষিকার এমন কাণ্ড ভুল বসতঃ হয়েছে। আগামীতে এর ব্যত্যয় ঘটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফজলুল হক জানিয়েছে, স্কুলে ক্লাশ নিজে না নিয়ে ছাত্রীদের ক্লাশ করানো আসলেই দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।