Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বুধবার, মে ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এটিএম বুথে জালিয়াতি করে ১৪ লাখ টাকা লুট!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ জুন ২০১৯, ১১:২১ AM
আপডেট: ১০ জুন ২০১৯, ১১:২১ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


এটিএম বুথে জালিয়াতি চক্রটি মোট ৯টি বুথ থেকে ১৪ লাখেরও বেশি টাকা তুলে নিয়েছে বলে জানিয়েছে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। আরও জানা গিয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া ছয় ইউক্রেনীয়র কাছে থেকে কোনো টাকা উদ্ধার হয়নি।

‘ফাস্টক্যাশ ক্যাম্পেইন’ নামে চালানো ওই জালিয়াতির আগাম তথ্য বাংলাদেশের পুলিশকেও জানায় মার্কিন সংস্থাটি। গত ৩০ মে বাংলাদেশে আসা সাত ইউক্রেনীয়র ঈদের ছুটিতে বুথে রাখা বেশি পরিমাণে টাকা হাতিয়ে ৬ জুন ভারতে চলে যাওয়ার কথা ছিল।

গত ৩১ মে রাতে বাড্ডার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে মুখোশ ও টুপি পরে ঢুকে দুই বিদেশি কোনো রেকর্ড ছাড়াই তিন লাখ টাকা তুলে নেয়। পরে ১ জুন রাতে একইভাবে খিলগাঁওয়ের তালতলায় বুথে টাকা তুলতে গিয়ে ধরা পড়ে দুজন। নিরাপত্তাকর্মীর হাত ফসকে পালিয়ে যায় একজন। আটক দেনিশ ভিতোমস্কির দেওয়া তথ্যে পান্থপথের একটি হোটেল থেকে ভালেনতিন সোকোলোভস্কি, ভালোদিমির ত্রিশেনস্কি, নাজারি ভজনোক, সের্গেই উইক্রাইনেৎস ও আলেগ শেভচুককে গ্রেপ্তার করে ডিবি।

জালিয়াতির ঘটনায় ইউক্রেনের ছয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হলেও ভিতালি ক্লিমচাক নামের আরেকজন পালিয়ে যায় অভিযানের সময়। গতকাল রবিবার পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তার ইউক্রেনের পাসপোর্টসহ (নম্বর এফই ৮০৪৪৪৮) বিস্তারিত তথ্য বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে সরবরাহ করেছেন তদন্তকারীরা। গতকাল পর্যন্ত ভিতালির দেশ ছাড়ার তথ্য ছিল না ইমিগ্রেশনে। এ কারণে তদন্তকারীদের ধারণা, স্থানীয় সহযোগীদের আশ্রয়ে লুকিয়ে আছে সে।

অন্যদিকে গ্রেপ্তার হওয়া ছয় ইউক্রেনীয়র কাছে থেকে কোনো টাকা উদ্ধার না হওয়ায় তদন্তকারীরা অনেকটাই নিশ্চিত, ওই জালিয়াতিতে সাত ইউক্রেনীয় ছাড়াও আরেকটি দল আছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশীয় সহযোগীদের শনাক্ত করার পাশাপাশি হিডেন কোবরার নেটওয়ার্কও বের করার চেষ্টা করছেন তারা। এর জন্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের ৮০ শতাংশ এটিএম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এনসিআরের সহায়তাও নিচ্ছেন তাঁরা।

গত ৩ জুন ছয়জনের তিন দিনের রিমান্ড (জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজত) মঞ্জুর হলেও প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় গতকাল পর্যন্ত তাদের রিমান্ডে নেয়নি ডিবি।

ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান রিপন বলেন, ‘চতুর আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খোলেনি। তাই আমরা তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছি। দেশীয় লিংকও যাচাই করছি।

প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো তদন্ত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও কম্পিউটার কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। আসামিরা রুশ ভাষা জানে। এ জন্য দোভাষীও জোগাড় করা হয়েছে। প্রস্তুতি নিয়ে তাদের রিমান্ডে নিয়ে আসব।’ তিনি আরো বলেন, ‘পলাতক ভিতালিকে ধরতেও অভিযান চলছে। তার ব্যাপারে বন্দরগুলোতে এবং বিভিন্ন ইউনিটে মেসেজ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।’

সিআইডির বিশেষ সুপার (এসএস) মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ডিবির পাশাপাশি আমরাও এই জালিয়াতির ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। শিগগিরই মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে আর্থিক জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত শুরু করব।’

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, জালিয়াতির জন্য ৩০ মে টু্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে আসে সাত ইউক্রেনীয়। ঈদের ছুটির সময় ঢাকায় জালিয়াতি করে ৬ জুন ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সতর্ক থাকায় বাড্ডার বুথে জালিয়াতি টের পেয়ে যায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে একটি বুথ থেকে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য ছিল তাদের কাছে। তদন্ত চলাকালে দেখা গেছে, জালিয়াতচক্র খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ, র‌্যাডিসন হোটেল, বারিধারাসহ ৯টি এলাকার বুথে হানা দেয়।

এসব বুথ থেকে ১৪ লাখ টাকারও বেশি তুলে নিয়েছে তারা। তবে গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনের কাছে কোনো টাকা বা বিদেশি মুদ্রা পাওয়া যায়নি। জালিয়াতি করার সময় তারা নিজেদের মোবাইল ফোনে রোমিংয়ের মাধ্যমে কারো সঙ্গে কথা বলে। ধারণা করা হচ্ছে, চক্রের অন্য সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে জালিয়াতির জন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা। এ জন্য চক্রের সব সদস্যকে শনাক্ত করতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, রবিবার ডিবি, সিআইডি ও কম্পিউটার কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য জালিয়াতি হওয়া কয়েকটি মেশিন থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন।

গত ৩১ মে রাতে বাড্ডার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে মুখোশ ও টুপি পরে ঢুকে দুই বিদেশি কোনো রেকর্ড ছাড়াই তিন লাখ টাকা তুলে নেয়। ১ জুন রাতে একইভাবে খিলগাঁওয়ের তালতলায় বুথে টাকা তুলতে গিয়ে ধরা পড়ে দুজন। নিরাপত্তাকর্মীর হাত ফসকে পালিয়ে যায় একজন। আটক দেনিশ ভিতোমস্কির দেওয়া তথ্যে পান্থপথের একটি হোটেল থেকে ভালেনতিন সোকোলোভস্কি, ভালোদিমির ত্রিশেনস্কি, নাজারি ভজনোক, সের্গেই উইক্রাইনেৎস ও আলেগ শেভচুককে গ্রেপ্তার করে ডিবি। আগেই সটকে পড়ে ভিতালি ক্লিমচাক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ডিবির করা মামলায় ৩ জুন ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত ছয়জনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Bootstrap Image Preview