Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘বাবা’কে মামা বলায় ছেলেকে খুন!

আজিুজুল ইসলাম সজীব, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৯ মে ২০১৯, ০৪:৩৪ PM
আপডেট: ২৯ মে ২০১৯, ০৪:৩৪ PM

bdmorning Image Preview


১০ দিনের মাথায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গে সৎ বাবার হাতে ছেলে খুন হয়েছে। হত্যার দায় স্বীকার করে ঘাতক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৫ মে বানিয়াচং উপজেলার ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শিশু ইয়াসিন এর মা রোকসানা বেগমের বিয়ে হয় শাল্লা থানার দুলাল মিয়ার সাথে। বিয়ের পর থেকেই তাদের সংসারে নানা অভাব অটনের কারণে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকতো। এসব কারণে রোকসানা বেগম এবং দুলাল মিয়ার সংসার বেশিদূর আগায়নি।

দুলাল মিয়া এবং রোকসানা বেগম এর মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরবর্তী রোকসানা বেগম তার ছেলে ইয়াসিনকে সাথে নিয়ে বাবার বাড়ি দৌলতপুরের নোয়াগাও হাইস্কুল হাটিতে চলে আসে। বাবার বাড়িতে থাকার সুবাদে পরিচয় হয় সৌরভ নামে জনৈক এক ব্যক্তির সাথে। একে অপরের সাথে পরিচয়ের পর সৌরভ বিয়ে করে রোকসানাকে।

বিয়ের পর শিশুপুত্র ইয়াছিনকে সৌরভ বাবা বলে ডাকতে বলে। ইয়াছিন এতে রাজি হয়নি। সে তাকে মামা হিসেবে সম্বোধন করতে থাকে। এতে সৌরভ শিশু ইয়াছিনের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

এছাড়া তাদের সংসারে বাড়তি ঝামেলা হিসেবে শিশু ইয়াছিনকে মেনে নিতে পারেনি সৌরভ। এ জন্য সে শিশু ইয়াছিনকে প্রায় সময়ই মারধোরও করতো। তারপরও ইয়াছিন তাকে বাবা বলবে না বলে জানায়। এরপর থেকেই সৌরভ শিশু ইয়াছিনকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।

গত ১৫ মে শিশু ইয়াছিনকে (৬) বাড়িতে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় তার মাসহ আত্মীয় স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। পরদিন ১৬ মে কাদিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী নির্জন পুকুরে শিশু ইয়াছিন নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী থানা পুলিশকে খবর দেয়। এসআই আমিনুল হকসহ এদকল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুকুরের কাঁদার ভিতর থেকে ইয়াছিনের নিথর দেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্টের জন্য হবিগঞ্জ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।

পরদিন ১৬ মে শিশু ইয়াছিনের মা রোকসানা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় এসআই আমিনুল হককে। মামলা দায়েরের পরপরই বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রাশেদ মোবারক, তদন্তকারী অফিসার আমিনুল হকসহ পুলিশের বিশেষ দল হত্যা রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে।

এরই মধ্যে হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ শিশু ইয়াছিন হত্যার রহস্য বের করতে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থাকে দায়িত্ব দেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশক্রমে ও দিকনির্দেশনায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এ ঘটনার সাথে কার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে এ বিষয়ে পুলিশ বিভিন্ন সূত্রের সন্ধান নিতে থাকে।

বিভিন্ন বিষয়াদি পর্যালোচনা করে সন্দেহের তীর পরে সৎ বাবা সৌরভের দিকে। সবশেষ গত সোমবার তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সুনামগঞ্জের দিরাই থানার পাগলাবাজার (পীরেরগাও) থেকে গ্রেফতার করা হয় শিশু ইয়াছিন এর সৎ বাবা সৌরভ মিয়াকে (২৮)। সে ধল গ্রামের দিরাই থানার আব্বাছ মিয়ার ছেলে।

সৌরভকে বানিয়াচং থানায় নিয়ে আসার পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশু ইয়াছিন হত্যার কথা স্বীকার করে। পরবর্তী বানিয়াচং থানা পুলিশ সৌরভকে হবিগঞ্জ কোর্টে হাজির করলে সে ১৬৪ ধারায় আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে শিশু হত্যার দায় স্বীকার করেছে এবং কিভাবে শিশু ইয়াছিনকে হত্যা করেছে তার বর্ননাও সে আদালতের কাছে জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছে।

Bootstrap Image Preview