Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এক দশকেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি আইলায় সাতক্ষীরার ক্ষতিগ্রস্তরা

রাহাত রাজা, সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৪ মে ২০১৯, ০৬:৪২ PM
আপডেট: ২৪ মে ২০১৯, ০৬:৪২ PM

bdmorning Image Preview


আগামিকাল ভয়াল ২৫ মে। এই দিনে ঘূর্ণিঝড় আইলায় লণ্ডভণ্ড করে দেয় সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা। দু:সহ ঘটনার ১০ বছরেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ কয়েক লাখ মানুষ। বাসস্থান, চিকিৎসা, সুপেয় পানি, স্যানিটেশন, পুষ্টিহীনতাসহ বিভিন্ন সংকটে আগের মতই বিপর্যস্থ উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। 

১০ বছর আগেও সবুজ বনানীতে পরিপূর্ণ ছিল গাবুরা পদ্মপুকুরসহ সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা। শাকসবজি, ধান ও পাটসহ অন্যান্য ফসলে ভরে উঠত পুরো এলাকা। তবে সেদিন আর নেই। লবনাক্ততায় বিষাক্ত হয়ে উঠেছে মাটি। চারিদিকে গাছপালাহীন ঘের আর ঘের। সবুজের বালাই নেই। নেই পরিবেশগত ভারসাম্য।

বেড়িবাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন অনেকেই। নেই সুপেয় জলের ব্যবস্থা। অপরিচ্ছন্ন পুকুরের পানি পান করে পেটের পীড়াসহ নানা জটিলতায় ভোগেন ওইসব এলাকার মানুষ।

গাবুরা এলাকার আব্দুর রহিম জানান, আমাদের এখানে কোন চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেই, নেই পানির ব্যবস্থা। বড় নদী পার হয়ে, বড় অসুখ হলে যে নিয়ে যাব, তার উপায় নেই। এখানে কোন হাসপাতালও নেই, কোন চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেই। এই যে গাবুরা ইউনিয়নে ৪০/৪৫ হাজার লোক। এখানে মাত্র ৪টি সরকারি পুকুর আছে। সংস্কারও করেনা। ফলে দুর্ভোগে রয়েছি। রাস্তাঘাট খারাপ হওয়ায় বিনা চিকিৎসায় মরতে হয় অনেককেই। সাইক্লোন শেল্টারও প্রয়োজনের তুলনায় কম। 

আইলার পরে গাবুরায় কোন সরকারিভাবে কাজ আসেনি। আইলার আগে যে ইটের সলিং রাস্তা ছিল, আইলায় তা ভেঙ্গে চলে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। 

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নে দু’লক্ষ লোকের বসবাস। খোলপেটুয়া নদীর ওপর ব্রিজ নির্মিত হলে লোকজন যাতায়াত করতে পারবে। এখানে কোন উন্নয়ন হয়না শুধুমাত্র ব্রিজের কারণে। বেড়িবাঁধের অবস্থাও খারাপ। আইলার ১০ বছর পুর্তিতেও কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি উপকূলীয় এলাকায়। গাবুরা এলাকায় একেবারে উন্নয়ন হয়নি। বেড়িবাঁধ সবচেয়ে প্রয়োজন। হাসপাতাল দরকার। সাইক্লোন শেল্টার দরকার। 

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ২০০৯ সালে এই জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় ভয়াবহ আইলা। সেই আইলার শিকার এই অঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতি। পরবর্তীতে সরকার নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যাপ্ত সমস্যা রয়েছে ওই এলাকায়।

সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে দেখে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন,শুকনো মৌসুমেই ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাধ সংস্কার করা হবে। আশ্রয়কেন্দ্র আরো নির্মাণের জন্য সমীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া আইলায় গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।  

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ মে ভয়ংকর জলোচ্ছ্বাস আইলার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকা। ১৫ ফুট উচ্চতায় ধেঁয়ে আসা জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে সুন্দরবন উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায়।

এসময় তিনটি ইউনিয়নের ৭৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হন। নিমিষেই গৃহহীন হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। ধ্বংস হয়ে যায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ আর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় স্বাস্থ্য, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।    
 

Bootstrap Image Preview