দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সঙ্কটে কারণে বানিয়াচংয়ের একমাত্র শতবর্ষী এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম।
১৮৯৬ সালে লোকনাথ রমনবিহারী নামে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। বর্তমানে এটি এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচিত। প্রাথমিকের পর সুশিক্ষিত, সভ্য এবং সৃষ্টিশীল মানুষ তৈরীর কারখানা হলো এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এখন সেই মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে যদি শিক্ষক সঙ্কট দিনের পর দিন চলতে থাকে তবে তার প্রভাব সামগ্রিকভাবে প্রকৃত মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রেও পড়তে বাধ্য।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানের এই বিদ্যালয়ে মোট ছাত্র সংখ্যা ৫৫০ জন। অন্যদিকে ৫৫০ জন শিক্ষার্থীদের পাঠদানে প্রধান শিক্ষক নিয়ে মাত্র ৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। সহকারি শিক্ষক নিয়ে ২৫ জনের পদে রয়েছেন মাত্র ছয়জন। তারাই চালাচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। এমএলএসএস পদে ৬ জনের মধ্যে আছে মাত্র একজন। পাশাপাশি এই বিদ্যালয়ে শুণ্য রয়েছে অফিস সহকারি, নাইটগার্ডের পদও।
বিদ্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে গণিত, রসায়ন, ভূগোল, ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, কম্পিউটার, চারু ও কারুকলা বিষয়ে শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে। ইংরেজিতে চার শিক্ষক থাকার কথা, সেখানে এই বিষয়ে একজন শিক্ষকও নাই। বাংলা বিষয়ে চারজনের মধ্যে আছে মাত্র একজন। গণিতে তিনজনের মধ্যে সেখানে আছেন মাত্র একজন শিক্ষক। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে শিক্ষক সঙ্কটের কারণে শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রেখাছ বলেন, বিদ্যালয়টিতে প্রতিবছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় কাঙ্খিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাই দ্রুত সম্ভব এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক সঙ্কট দূরীকরণে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) জাকির হোসেইন শিক্ষক সঙ্কটের কথা স্বীকার করে জানান, একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী প্যাটার্ন অনুযায়ী এই বিদ্যালয়ে ২৫ জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে ৬ জন শিক্ষক দিয়ে ৫৫০ জন শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। এই বিদ্যালয়ে দূরের কোন শিক্ষক বদলী হয়ে আসতে চান না। আবার কেউ আসলেও কয়েক মাস থেকে অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যান। অনেক সময় শিক্ষকদেরই দাপ্তরিক কাজ করতে হয়।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরো জানান, প্রতি মাসেই শিক্ষকদের শূন্য পদের তালিকা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। কেন শূন্য পদগুলোতে সময়মতো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে না তা আমার বোধগম্য নয়। সুতরাং শিক্ষক সঙ্কট নিরসনে কোনো প্রকার অবহেলা বা কালপেক্ষণ মোটেই কাম্য নয়।