বুরকিনা ফাসো’র উত্তরে ফোবে শহর থেকে সামান্য দূরত্বে এই স্কুলগুলো অবস্থান। এই এলাকায় সশস্ত্র হামলার পর ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হামলাকারীরা অনেক স্কুল পুড়িয়ে ফেলেছে। তারা শিক্ষকদের ওপর-ও হামলা চালিয়েছে। সেই হামলার ঘটনার পর স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষক-কর্মচারীরা ভয়ে পালিয়ে গেছেন।
বুরকিনা ফাসোর এক স্কুলের দৃশ্য। এক শ্রেণিকক্ষের এক পাশে জড়ো করে রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের বসার চেয়ার-ডেস্ক। দেয়ালে ঝোলানো ব্ল্যাকবোর্ডের এক পাশে লেখা ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮। অর্থাৎ ওই তারিখের পর স্কুলটিতে আর ক্লাস হয়নি।
এ সম্পর্কে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক স্যামুয়েল সোয়াদোগো বলেন, হামলাকারীরা একজন শিক্ষককে হত্যা করেছিলো তখন কেউ কিছু করেনি। শহরের আইন শৃংখলা বাহিনী তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ নিয়ে ওই শিক্ষকের মন্তব্য, ‘আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা তো নিজেদেরই দেখতে হবে।’
গত কয়েক মাসে বুরকিনা ফাসোর উত্তর, সাহেল এবং পূর্ব-এই তিনটি অঞ্চলে ২৮৬৯টি স্কুলের মধ্যে ১১১১টি স্কুলই বন্ধ হয়ে গেছে। দেশটির উত্তরের এই অঞ্চলগুলো মালি এবং নাইজার সীমান্তের কাছে। আর এই সীমান্তে জিহাদি জঙ্গিরা তৎপরতা চালাচ্ছে কয়েক বছর ধরে।
জঙ্গিদের হামলার কারণে সেখানে একের পর এক স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেড় লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বুরকিনা ফাসোতে শতকরা ৫৮ভাগ শিশু প্রাথমিক স্কুল শেষ করতে পেরেছিল ২০১৬ সালে। যে দেশের ৪২ভাগ শিশুই প্রাথমিক স্কুল শেষ করতে পারে না, সেই দেশে স্কুল বন্ধ হয়ে থাকলে তো ভয়াবহ অবস্থা হয়।
জঙ্গি হামলার কারণে অভিভাবকরা তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠানো বিপদজনক মনে করছেন। ইসলামি জঙ্গিরা ইতিমধ্যে অনেক স্কুলে হামলার জন্য টার্গেট করেছিল । এসব হামলার কারণ হচ্ছে, স্কুলে পশ্চিমা শিক্ষা, যা জঙ্গিদের একেবারেই পছন্দ নয়। তারা স্কুলগুলোতে পশ্চিমা শিক্ষার বদলে ইসলামি শিক্ষা চালু করতে চায়।
এ কারণে অনেক স্কুলে শিক্ষকরাও নিরাপত্তা হুমকির কারণে স্কুল বন্ধ রেখেছেন। তবে ফোবে এলাকায় এখনও কিছু স্কুল খোলা রয়েছে। যদিও সেসব স্কুলে কোনো ছাত্র-ছাত্রী নেই। শ্রেণিকক্ষগুলো খালি পড়ে আছে। আতঙ্কিত বাবা-মায়েরা শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।
এ সম্পর্কে এক শিক্ষকের আশঙ্কা, বিপদজনক পরিস্থিতির কারণে যেসব শিক্ষার্থী স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে, এদের অনেকই হয়তো আর কখনও স্কুলে ফিরবে না।
নিরাপত্তার হুমকি আছে এরকম এলাকাগুলোর এক লাখের বেশি মানুষ শিশুদের নিয়ে বুরকিনা ফাসোর নিরাপদ জায়গায় ক্যাম্পে উঠেছেন। জঙ্গি হামলার ভয়ের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কারণের অনেকে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এদের একটা বড় অংশই শিশু। তাদের জন্য ক্যাম্পেই জরুরি শ্রেণিকক্ষ করে সেখানে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।
বুরকিনা ফাসোর এই পরিস্থিতিতে শিশুদের শিক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শিশুদের স্কুল যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে জঙ্গিরা শিশুদেরকেই নিয়োগের চেষ্টা করবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা