Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শহরজুড়ে ছেলে ধরা ও রোহিঙ্গা আতঙ্ক, মাইকিং করছে পুলিশ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯ মে ২০১৯, ০৯:২৩ PM
আপডেট: ০৯ মে ২০১৯, ০৯:২৩ PM

bdmorning Image Preview


সাতক্ষীরা শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়ি থেকে শুরু করে অলিগলি, হাটে-বাজারে বিরাজ করছে ছেলে-মেয়ে ধরা আতঙ্ক। আতঙ্কিত হয়ে ছেলে-মেয়েদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছেন না বাবা-মা। বিদ্যালয়ের জন্য বাইরে যেতে দিলেও সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখছেন সন্তানের প্রতি।

কয়েকদিন আগে থেকেই এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। অপরিচিত কাউকে পেলেই গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সাতক্ষীরা সদরসহ তালা থানায় তিনজনকে ছেলে ধরা আতঙ্কে গণধোলাই দিয়েছেন জনগণ। এরপর তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়। তবে তারা মস্তিষ্ক বিকৃত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সাতক্ষীরার তালা সদরের ইসলামকাটি ইউনিয়নের সুজনশাহ গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর নাংলা এলাকায় ছেলে-মেয়ে ধরা ভেবে এক বৃদ্ধকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে জনগণ। এলাকার মানুষ ছেলে ধরা বেরিয়েছে ভেবে আতঙ্কিত। সন্তানদের ঘর থেকে বা বাড়ির বাইরে বের হতে দিচ্ছেন না কেউ।

তালা সদরের খড়েরডাঙ্গা গ্রামের শামীম হোসেন বলেন, এলাকায় রোহিঙ্গা বের হয়েছে। যারা ছেলে-মেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে এমন আতঙ্ক সবার মাঝে। সন্ধ্যার পর আতঙ্ক বাড়ছে গ্রামঞ্চলে। কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

সাতক্ষীরা সদরের বাকাল এলাকার মরিয়ম বেগম বলেন, ছেলে ধরা আতঙ্ক সবখানে। ঘটনা কি বুঝতে পারছি না। টিভিতে বা পেপার পত্রিকায় এটা নিয়ে কোনো সংবাদ দেখছি না। ফেসবুকে দেখছি ছেলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমার ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছি।

এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটিকে গুজব বলে জনসচেতনতার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে থানায় থানায়। ছেলে-মেয়ে ধরা গুজব বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে ফেসবুকে। থানা পুলিশের ওসিরা নেমে পড়েছেন সচেতনতামূলক প্রচারণায়।

জানা গেছে, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে সাতক্ষীরার আটটি থানা এলাকায় গুজবে কান না দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। জনসচেতনতার জন্য সর্বসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করছে পুলিশ।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে ছেলে ধরা একটি গুজব ছড়িয়েছে ফেসবুকে। এরপর তা এখন মানুষের মুখে মুখে। এটি গুজব। এমন ঘটনার সত্যতা নেই। না বুঝেই এক ধরনের মানুষ এই গুজব ছড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিম বাংলার একটা মুভির ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে ছেলে ধরা বলে প্রচার করা হয়েছে ফেসবুকে। সেটা না জেনে বুঝে যাচাই না করেই বিভিন্ন মানুষ ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়ে ভাইরাল করে ফেলেছে। এতে করে গুজবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মানুষ। তবে সাতক্ষীরার আটটি থানায় মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। ওসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। গুজবে কান না দিতে জনগণকে বলা হচ্ছে। জেলা ও থানা পুলিশের ফেসবুকে গুজবে কান না দিতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান আরও বলেন, তালা থানায়, সাতক্ষীরা সদরের বাশদাহ এলাকায় ও কলারোয়া থানায় তিনটি ঘটনা ঘটেছে। যেটিতে গুজবের মাত্রা আরও বেড়েছে। তালার নাংলা এলাকায় ছেলে ধরা আতঙ্কে এক বৃদ্ধ মানুষকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয়া হয়। পরে দেখা যায় বৃদ্ধ মানুষটি মস্তিষ্ক বিকৃত। এছাড়া কলারোয়া দুই নারীসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশে দেয়। তারা ভিক্ষা করে। সাতক্ষীরা সদরে বাঁশদহ এলাকায় একজনকে একইভাবে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয়া হয়, তিনিও মস্তিষ্ক বিকৃত।

ছেলে ধরার ঘটনা নিছক গুজব ছাড়া কিছু নয়। সবাইকে এ ব্যাপারে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যদি কোনো ঘটনা এমন সামনে আসে তবে তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানান। আমরা ব্যবস্থা নেব। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

Bootstrap Image Preview