Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফিলিস্তিন নিয়ে ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর শতাব্দীর সেরা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ফাঁস

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০১৯, ০৫:৫০ PM
আপডেট: ০৮ মে ২০১৯, ০৫:৫০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্বাক্ষরিত কথিত ‘শান্তি’ চুক্তি এবার প্রকাশিত হয়েছে। এই চুক্তিটিকে দুই দেশের পক্ষ থেকে ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৮ মে) ইসরায়েল সরকার সমর্থিত জাতীয় দৈনিক হাইয়ুম এরকম একটি নথি প্রকাশ করেছে। 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও তার মুখপত্র হিসেবে পরিচিত জাতীয় দৈনিক হাইয়ুম সেই নথি প্রকাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল কিংবা ফিলিস্তিন হাইয়ুমের প্রকাশিত ওই চুক্তির সত্যতা নিশ্চিত করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আগামী মাসে এই চুক্তিটি প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
 ইসরায়েলের ওই দৈনিকটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোই হবে চুক্তিটির মূল দফা হচ্ছে-

১. চুক্তি

ইসরায়েল, ফিলিন্তিনি স্বাধীনতা সংগঠন (পিএলও) এবং হামাসের মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ফিলিস্তিনিদের দেশ হিসেবে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় ‘নিউ ফিলিস্তিন’ নামে একটি দেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। ফিলিস্তিন নামে আর কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না।

২. ভূমির ওপর সার্বভৌমত্ব

চুক্তি অনুযায়ী, গাজা উপত্যকা, জিহুদিয়া পার্বত্য এলাকা এবং পশ্চিম তীরের সামারিয়া এলাকা নিয়ে ‘নিউ ফিলিস্তিন’ নামে রাষ্ট্রের জন্ম হলেও পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতিগুলোর ওপর তার কোনও সার্বভৌমত্ব থাকবে না। এসবের সার্বভৌমত্ব থাকবে ইসরায়েলের হাতে।

৩. জেরুজালেম

জেরুজালেমকে দিখণ্ডিত করা কিংবা কোনো ধরনের ভাগাভাগি করা হবে না। এটি ইসরায়েল এবং ‘নিউ ফিলিস্তিনের’ রাজধানী হিসেবে বিবেচিত হবে। জেরুজালেমে বসবাসরত আরব মুসলিমরা নাগরিক হবে নিউ ফিলিস্তিনের।

জেরুজালেমে ইসরায়েলি নগর কর্তৃপক্ষ শহরের সব এলাকার দায়িত্ব পাবে তবে ‘নিউ ফিলিস্তিন’ রাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যাপারটি নিয়ে কাজ করা হবে। নয়া ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কর ও পানীয় ব্যয় জেরুজালেমের ইসরায়েলি নগর কর্তৃপক্ষের কাছে পরিশোধ করবে।

ইহুদিরা আরব নাগরিকদের ঘরবাড়ি কিনতে পারবেন না আর আরব নাগরিকরাও কোনো ইহুদির বাড়িঘর কিনতে পারবে না। জেরুজালেমে নতুন করে আর কোনো এলাকা দখল করা হবে না এবং ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর মর্যাদা সমুন্নত থাকবে।

৪. গাজা

নিউ ফিলিস্তিনকে কিছু জমি ইজারা দেবে মিসর। যেখানে একটি বিমানবন্দর এবং বাণিজ্যিক ও কৃষিখাতের জন্য ফ্যাক্টরি নির্মাণ করা হবে। তবে ‘নিউ ফিলিস্তিনকে’ মিসরের ইজারা দেয়া এসব জমিতে কেউ বসবাস করতে পারবে না।

ইজারা বাবদ মিসরকে নিয়মিত হারে অর্থ পরিশোধ করবে নিউ ফিলিস্তিন সরকার। আর ইজারার জন্য কী পরিমাণ অর্থ দিতে হবে ‘নয়া ফিলিস্তিনকে’ সেটা অন্য কোনো দেশের মধ্যস্ততায় দুই দেশ মিলে নির্ধারণ করবে।

৫. সহযোগী দেশ

চুক্তির বাস্তবায়ন করতে আর্থিক সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো। নয়া ফিলিস্তিনের বেশ কিছু জাতীয় প্রকল্পে ৩০০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দেবে তারা।

এসব প্রকল্পের আওতায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে থাকা ইহুদি বসতিগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়টিও অন্তর্ভূক্ত থাকবে। সেই ৩০০ কোটি ডলারের ২০ শতাংশ দেবে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ দেবে ১০ শতাংশ এবং বাকি ৭০ শতাংশ অর্থের যোগান হবে উপসাগরীয় দেশগুলোর তেল বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত আয় থেকে। কেননা এই চুক্তির মাধ্যমে তারাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।

৬. সশস্ত্র বাহিনী

নয়া ফিলিস্তিন কোনো সেনাবাহিনী গঠন করতে পারবে না। শুধু দেশটির পুলিশকে হালকা কিছু অস্ত্র বহনের অনুমতি দেয়া হবে। তাছাড়া ইসরায়েল এবং নয়া ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি সুরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

সেই চুক্তির আওতায় দেশকে বহিশত্রুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ইসরায়েলকে নিয়মিত হারে অর্থ পরিশোধ করবে নয়া ফিলিস্তিন। মধ্যস্থতাকারী সহযোগী দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এ অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।

৭. চুক্তিটি কার্যকর করার শর্তাবলী

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগঠন হামাস ব্যক্তিগত অস্ত্রসহ তাদের সকল অস্ত্র মিসর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবে। হামাসের নেতাসহ তাদের দলের সদস্যদের সবাই নয়া ফিলিস্তিন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত সহযোগী দেশগুলোর কাছ থেকে নিয়মিত হারে ‘বেতন’ পাবে।

গাজা উপত্যকার স্থল ও সমুদ্রসীমা উন্মুক্ত রাখা হবে। যেখান দিয়ে ইসরায়েল এবং মিসরের মানুষের চলাচলসহ অবাধে পণ্য পরিবহন করা যাবে। বর্তমানে জুয়েদা ও সামারিয়ার মধ্যে যেমন প্রক্রিয়া বিদ্যমান ঠিক সেরকম।

রাষ্ট্র গঠনের এক বছরের মধ্যে নয়া ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে নতুন সরকার গঠন করতে হবে। দেশের যেকোনো নাগরিক নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন। নির্বাচনের এক বছর পর থেকে ইসরায়েল যেসব ফিলিস্তিনি বন্দি আছেন তিন বছর অন্তর ধীরে ধীরে সবাইকে মুক্ত করে দেয়া হবে।

পাঁচ বছরের মধ্যে নয়া ফিলিস্তিনে একটি সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দর স্থাপন করা হবে। আর এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলের সমুদ্র ও বিমানবন্দর ব্যবহার করার সুযোগ পাবে ফিলিস্তিন। নয়া ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে সীমান্ত উন্মুক্ত থাকবে।

নয়া ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে একটি মহাসড়ক নির্মাণ করা হবে। যার নির্মাণ খরচের অর্ধেক দেবে চীন। তাছাড়া প্রত্যেকে ১০ শতাংশ করে বাকি অর্থের যোগান দেবে দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগঠন হামাস ও ইসলামিক জিহাদ যদি ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ প্রত্যাখ্যান করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে দেয়া সব ধরনের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেবে। তাছাড়া ফিলিস্তিনকে অন্য কোনো দেশ যাতে আর্থিক সাহায্য দিতে না পারে সেটাও নিশ্চিত করবে যুক্তরাষ্ট্র।

যদি ফিলিস্তিনের ক্ষমতাসীন দল পিএলও চুক্তিটি মেনে নেয় এবং হামাস অথবা ইসলামিক জিহাদ কেউ তা প্রত্যাখ্যান করে তাহলে উভয় দলকে এর জন্য দায়ী করা হবে। আর এর কারণে গাজা উপত্যকায় এসব দলকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল হামলা চালায় ইসরায়েলের পক্ষ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। মসজিদে নামাজ পড়তে যান।

Bootstrap Image Preview