শত দুঃখ-কষ্ট ও বাধা-বিপত্তি ইসারুলকে লেখাপড়া থেকে দূরে রাখতে পারেনি। প্রবল ইচ্ছাশক্তি অধ্যবসায় ও দৃঢ় মনোবলের কাছে হার মেনেছে দরিদ্রতা।
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডের অধীনে গোদাগাড়ী উপজেলার বিশ্বনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ হতে অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে সকল প্রতিকূলতাকে হার মানিয়েছে মোঃ ইসারুল।
ইসারুল গোদাগাড়ী উপজেলার অবিলন্দা ভূতপুকুর হতদরিদ্র মো. আনারুল ইসলাম ও আদুরি বেগমের ছেলে। বাবা-মায়ের ৩ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে ইসারুল বড়। ইসারুল জেএসসি পরীক্ষায় ৪.৮৫ ও পিএসসি পরীক্ষায় ৪.৫০ ফলাফল অর্জন করেন।
ইসারুল বলেন, আমার এ সাফল্যের পেছনে মায়ের অবদানটাই বেশি। তিনি সব সময় আমাকে লেখাপড়ার জন্য উৎসাহ দিতেন এবং খোঁজ খবর নিতেন। রাত জেগে যতক্ষণ পড়তাম মা আমায় চোখে চোখে রাখতো। আর বাবা দিনমজুর হওয়াতে ভালকরে লেখপড়ার জন্য সব সময় বলতেন। তবে বাবা অতি দারিদ্র হওয়ায় সারা দিনই বাইরে থাকতেন।
ইসারুলের বাবা আনারুল ইসলাম অন্যের কৃষি জমিতে দিনমজুর হিসেবে নিড়ানির কাজ করতেন। নিজেদের জায়গা জমি না থাকার ফলে খুব কষ্ট করে সংসার চালান। সংসার চালতে বাবার কষ্ট দেখে অদম্য মেধাবী ইসারুল নিজেও বাবার পাশাপাশি কৃষি জমিতে কাজ করে লেখাপড়ার ও সংসারের খরচ জোগাতো।
ইসারুল জানান, আমি কখনো কৃষি জমিতে আবার কখনো আলুর ক্ষেতে কাজ করে টাকা রোজগার করতাম। ভাবতাম বাবা-মার বড় সংসার কিভাবে চলবে। নিজে কাজ না করলে ভালভাবে পড়ালেখা করা সম্ভব না। তাই কোন কাজকে ছোট মনে না করে কাজ করতাম।
ইসারুলের ছোট বোন অষ্টম শ্রেণিতে, তার আরেক ছোট ভাই চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তার রোল নং ১ আর ছোট ভাইটি প্রথম শ্রেণিতে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসারুলের দাদার বাড়ি ছিলো চরাঞ্চলে। নদী ভাঙনের ফলে অবিলন্দা ভূতপুকুরে এসে পুকুর পাড়ে খাস জমিতে এসে বাড়ি করে মাথা গোঁজার ঠাই করেছেন।
ইসারুলের মা আদুরী বেগমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার ছেলে নিয়মিত স্কুলে যাওয়-আসা ও লেখাপড়া করতো। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। সে নিজেই পড়ার প্রতি আগ্রহ করতা আমি তাকে সবসময় উৎসাহ দিতাম। রাত জেগে পড়তো আবার খুব সকালে উঠে পড়তে বসতো। আবার কখনো ঘুম থেকে উঠে রাত তিনটার দিকে পড়তে বসে যেতো। তার ছেলের সাফল্যে তিনি ও খুবই খুশি। তিনি চান বড় হয়ে তার ছেলে যেন একটি সরকারি চাকরি পায়। এটাই শেষ চাওয়া।
অদম্য মেধামী ইসারুল জানান, আমি নিয়মিত পড়তাম। টাকা-পয়সার জন্য প্রাইভেট পড়তে পারতাম না। পরীক্ষার মাত্র ৩ মাস আগে পাশের গ্রামের এক স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়েছি মাত্র।
তিনি আরও বলেন, স্কুলের সকল স্যারের আমাক ভালবাসতেও সহযোগিতা করতেন তাই তাদের কথা ভুলবার নয়। ইসারুলের আশা শহরের একটি ভালো কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া। তবে তিনি শঙ্কিক দারিদ্রতার কারণে শেষ পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে কিনা। ইসারুলের সব চেয়ে পছন্দের বিষয় ইংরেজী। সে ইংরেজীতে অনার্স, মাস্টার্স করে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান। তবে দারিদ্রতা যেন তার কাল না হয়ে দাঁড়ায় এটাই এখন ইসারুলের পরিবারের শঙ্কা।
বিশ্বনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, মোঃ ইসারুল হক খুবই ভালো ছাত্র। তার পরিবার খুব দরিদ্র। নিজের ইচ্ছা শক্তিতে তার এই সফলতা। আমার বিদ্যালয় হতে একমাত্র জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্র সে।
তিনি আরোও জানান, সরকারে পক্ষ হতে বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে মেধাবী ইসারুলে পাশে দাঁড়ালে সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।