শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো শিশু। একটি গির্জাতেই ঝরেছে ১৪টি কচি প্রাণ। গির্জায় একসঙ্গে প্রার্থনার সঙ্গে গান গাইছিল তারা। পরক্ষণেই বিস্ফোরণ! সিএনএন এমনই এক মর্মস্পর্শী ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল করেছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ইস্টার সানডে উপলক্ষে বাট্টিকালোয়া সিটিতের জিওন গির্জায় জড়ো হয়েছিল শিশুরা। বিস্ফোরণের ঠিক আগ মুহূর্তে তারা বৃত্তাকার হয়ে হাঁটু মুড়ে বসেছিল। ওই গির্জার বাইরে বিস্ফোরণ ঘটান মোহাম্মেদ আসার মোহাম্মেদ আজার। গির্জার অভ্যন্তরেই প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গির্জার কর্মকর্তারা তাকে আটকান। এরপরই ১৪টা শিশুর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়।
জিওন গির্জার আঙিনায় শিশুরা বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে ছিল। হাতে মোমবাতি নিয়ে প্রার্থনা করছিল ও গান গাইছিল তারা। মাঝে আরো কয়েকজন হাঁটু মুড়ে বসেছিল। কিছুক্ষণ বাদেই বিরতি নেয়ার কথা, বেরিয়ে পড়তো গির্জা থেকে। তার আগেই ঠিক সকাল ৯টায় ফাটে বোমা।
ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, বাচ্চারা ব্যাপক আনন্দিত ছিল। একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি করছে তারা। আজার গির্জার দরকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তখন ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৮টা ৫১ মিনিট। দরজায় পৌঁছানোর পর গির্জার দুই কর্মকর্তা রমেশ রাজু এবং রাসালিঙ্গম শশীকুমার তাকে আটকে দেন।
ওই গির্জার সাউন্ড টেকনিশিয়ান রাজিভকারান ভিমালারেতনাম জানায়, রমেশ এবং শশী তাকে (আজার) আটকানোর চেষ্টা করেন। আমি দেখলাম এক টি-শার্ট ও ক্যাপ পরিহিত ব্যক্তি দুটো ব্যাগ কাঁধে নিয়ে গির্জার দরজর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু কেউ এভাবে গির্জায় আসেন না। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি কোনো ক্রীড়া আয়োজনে এসেছেন।
বোমাটি বিস্ফোরণের পর সেখানে ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। যারা আজারকে আটকেছিলেন তারাও মারা গেছেন। রমেশ আর শশী এখন তাদের বীর। তারা না আটকালে হয়তো গির্জার মধ্যে আরো অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটতো।
শ্রীলঙ্কার ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো রবিবারের প্রার্থনা তাদের ঘরেই সরেছে আরো জঙ্গি হামলার আশঙ্কায়। কলোম্বোর আর্যবিশপ কার্ডিনাল ম্যালকম রঞ্জিত তার বাড়িতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সেই হামলার ঘটনাগুলো দেখার ব্যবস্থা করেন। সেখানে অধিকাংশ যাজক ও নানরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, এখন শ্রীলঙ্কার প্রায় সবগুলো গির্জাই বন্ধ রয়েছে। সেখানে প্রহরায় রয়েছেন সশস্ত্র সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তারা। রবিবারের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ সপ্তাহের শেষে আবারো হামলার খবর ছড়িয়েছে। পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে সব ক্যাথলিক স্কুল। তবে আগামীকাল সোমবার থেকে সরকারি বিদ্যালয়ের গ্রেড ছয় এবং তদুর্ধ্ব শ্রেণী খোলা থাকবে।