Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সাতক্ষীরার ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন, আতঙ্কে সীমান্তের লাখো মানুষ

মীর খায়রুল আলম, দেবহাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৪ মে ২০১৯, ১০:২৫ PM
আপডেট: ০৪ মে ২০১৯, ১০:২৫ PM

bdmorning Image Preview


উপজেলার নাংলা হতে নওয়াপাড় স্লুইচ গেট পর্যন্ত পুরাতন বেড়িবাঁধের অধিকাংশ স্থানে ভেঙ্গে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্বল বেড়িবাধ প্রায় পুরোপুরি ভেঙ্গে যেতে বসেছে। আর এতে দেবহাটা উপজেলার ইছামতি সীমান্ত সংলগ্ন খানজিয়া, নাংলা, নওয়াপাড়া, ছুটিপুর, গাংআটি, হাদিপুর, বসন্তপুর, খানজিয়া, শুলপুর, নলতা, শেহারা, দুরদুরে, মাঘুরালীসহ প্রায় ১০-১৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশাংঙ্কা বিরাজ করছে।

এসব এলাকার মানুষের রাত শুরু হয় দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে। কারণ নদী ভাঙ্গনের ফলে তলিয়ে যেতে পারে শতশত মৎস্য ঘের, হাজার হাজার বিঘার ফসলের আবাদ এবং ভেসে যাবে বসতবাড়ির আঙ্গিনা। এমনকি নদীর পানিতে একাকার হয়ে যাবে গোটা এলাকা। 

উল্লেখ্য যে, থানা ভবন হতে কয়েক গজ দূরে সুশীলগাঁতী নামক স্থানে ২০০৯ সালে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এরপর ২০১৩ সালে আবারো ভাঙ্গন দেখা দেয় একই স্থানে। এছাড়া ২০১৪ ও ১৫সালে ভাঙ্গন দেখা যায় নাংলা বাজার সংলগ্ন বেড়িতে, দেবহাটা পাঠবাড়ি সংলগ্ন বেড়িতে ও সুশীলগাঁতী-টাউনশ্রীপুরের বেশ কিছু স্থানে।

সে সময় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন জন পরিদর্শনে আসেন স্থানগুলোতে। কিন্তু যে পরিমাণ জেট করা হয় তার সিংহ ভাগ চলে যায় বিভিন্ন অস্বাধু ব্যক্তিদের পকেটে। দুর্নীতি আর অনিয়মের ফলে ২০১৬ সালে দেখা দেয় নদী বেড়িবাঁধে তীব্র ফাটল আর ভাঙ্গন। 

প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনের ফলে নদী গর্ভে বাংলাদেশের মানচিত্রের একটি অংশ বিলিন হয়ে যাচ্ছে। যার ফলপ্রসূত দেবহাটা ভূমি অফিসের আর এস রেকর্ড মোতাবেক প্রকাশ পেয়েছে দেবহাটার ভাতশালা সীমান্তের ৫৫.০০একর, টাউন শ্রীপুর মৌজার ২৬১৩ ও ৯৯৫ দাগের ৯৬.৬৩ একর, সুশিলগাতী মৌজার ১১৫০ দাগের ২২.৪১ একর, শিবনগর মৌজার ৭০৭ ও ৭৩৮ দাগের ২৫.২১ একর, দেবহাটা মৌজার ৫৫০৫ দাগের ৯.৪৪ একর, বসন্তপুর মৌজার ১,২ দাগের ১.৩৭ একর জমি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। 

সীমান্ত পাড়ের বাসিন্দা সাইদুর রহমান জানান, নদীর বেড়িবাঁধ যেভাবে ভাঙতে শুরু করেছে তাতে আমাদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। না জানি কখন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বা ধ্বসে পানি প্রবেশ করে। নদী ভেঙ্গে গেলে আমাদের দুঃখের শেষ থাকবে না। আমরা কোথায় যাব, কি করব ভেবে পাচ্ছি না।  

আরেক বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, নদীতে অবৈধভাবে বালু কাটা, জাল ঠেলা, অবৈধ ড্রেন স্থাপন, নদী পাড়ে পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় বার বার এই ভাঙ্গন দেখা দেয়। পূর্বের নদী ভাঙ্গনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হয় স্থানীয়রা।

সে সময়ে জনদুর্ভোগের শেষ ছিলনা। ভাঙ্গন হলেই পরিদর্শনে আসেন বিভিন্ন জন। কিন্তু তাতে আমাদের কোন লাভ হয় না। বরং লাভ হয় প্রভাবশালীদের। প্রকল্প দেখিয়ে সরকারের মোটা অংকের টাকা চলে যায় তাদের পকেটে। দুর্নীতি আর অনিয়মের ফলে আমরা বেড়িবাধের স্থায়ী সমাধান পাচ্ছি না। আমাদের দাবি আর সিসি ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ রক্ষা করা হোক। 

নওয়াপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমান জানান, আমাদের উপজেলার সীমানা দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন করায় বার বার ভাঙ্গন দেখা দেয়। আমি বালু বন্ধের জন্য স্থানীয় সংসদ, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি।

শুক্রবার নাওয়াপাড়া স্লুইচ গেটের মুখে ভাঙ্গন দেখা দিলে বালুর বস্থা দিয়ে সেটি আপাতত রোধ করেছি। নাংলার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন রক্ষায় আমরা কাজ করছি।   

এবিষয়ে কালিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ওবাদুল হক মল্লিক বলেন, আমি এলাকা পরিদর্শন করেছি। উপরে জানানো হয়েছে। বাজেট পেলেই কাজ শুরু হবে।  

Bootstrap Image Preview