Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এসএসসির জন্য ১৯ হাজার পচা মিষ্টি মজুদ, মদন গোপাল বলেই রক্ষা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ মে ২০১৯, ০৫:২১ PM
আপডেট: ০২ মে ২০১৯, ০৫:২১ PM

bdmorning Image Preview


গত ২৮ এপ্রিল কিশোরগঞ্জে জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ অভিযানে হিমাগারের ২৪টি প্লাস্টিকের ড্রামে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ২৪ মণ (প্রায় ১৯ হাজার পিস) মিষ্টির সন্ধান পায় তারা। ৬০টি কার্টনে ১৫ মণ মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুরও পাওয়া যায়।

হিমাগারে রাখা সেই ২৪ মণ মিষ্টি কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে অবস্থিত সবচেয়ে নামি ও সুপরিচিত মিষ্টির দোকান হিসেবে খ্যাত মদন গোপাল সুইটস কেবিনের।

আগামী ৬ মে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সম্ভাব্য দিন। মূলত এই দিনটির কথা মাথায় রেখে মিষ্টির ব্যাপক চাহিদা মেটাতেই অধিক মুনাফার আশায় এই বিপুল পরিমাণ মিষ্টি মজুত করা হয়। এ ছাড়া আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য ভৈরব উপজেলার কয়েকজন ব্যবসায়ী ৬০টি কার্টনে ১৫ মণ মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর মজুত রাখেন।

জব্দ করা মেয়াদোত্তীর্ণ মিষ্টি ড্রাম থেকে মাটিতে ফেলে বালু দিয়ে নষ্ট করা হয়। এ ছাড়া ১৫ মণ খেজুর আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়। অভিযান পরিচালনাকারী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের সহকারী পরিচালক মো. ইব্রাহিম হোসেন জানান এসব তথ্য।

এ ঘটনায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫১ ধারায় মেয়াদোত্তীর্ণ মালামাল সংরক্ষণের দায়ে এগারসিন্দুর কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে আদায় করেন সহকারী পরিচালক মো. ইব্রাহিম হোসেন।

কিন্তু মিষ্টি ও খেজুরের মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি। এতে জেলার নাগরিক মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের ব্যানারে একটি সংগঠন মানববন্ধন করে।

গতকাল মঙ্গলবার (১ মে) জেলা শহরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে তারা। পরে অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

সাবেক সিভিল সার্জন অধ্যক্ষ ডা. মো. আতিকুল সারোয়ার বলেন, হিমাগারে কোনো মতেই তৈরি খাবার রাখা যাবে না, এটি স্বাস্থ্য বিধি বহির্ভূত। কারণ এর ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির গুরুতর আশঙ্কা থাকে।

তিনি বলেন, হিমাগারে খাদ্যে অন্যান্য স্থানের তুলনায় জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি শতগুণ বেশি। তাই জনস্বার্থে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই।

কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়া মো. ফেরদৌস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নষ্ট ও মেয়াদোত্তীর্ণ মিষ্টি ও খেজুরের মালিকানা নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা কর্তব্য ছিল। কিন্তু তা না করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগে ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। তাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের সহকারী পরিচালক মো. ইব্রাহিম হোসেন জানান, জব্দ করা মিষ্টি ও খেজুর মেয়াদোত্তীর্ণ ও নষ্ট ছিল এবং শস্যের হিমাগারে এগুলোর সংরক্ষণও যথাযথ ছিল না।

তবে মিষ্টি ও খেজুর নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও এবং মালিকদের পরিচয় জানার পরও তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলো না- এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ইব্রাহিম হোসেন বলেন, অবৈধভাবে সংরক্ষণের অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে কোল্ড স্টোরেজকে জরিমানা করে বিষয়টি ফয়সালা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মিষ্টি ও খেজুর মালিকদের দোকানে অভিযান চালিয়ে এ ধরনের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Bootstrap Image Preview