যেখানে ১ মে সারাবিশ্বে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস। আর বাংলাদেশে দিবসটি পালন করা হচ্ছে ১৯৭২ সাল থেকে। শ্রমিকের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি এ দিবস পালনের মূলে রয়েছে শ্রমিক শোষণ বন্ধ করা।কিন্তু অবাক বিস্ময় দিবসটি সম্পর্কে এখনো অন্ধকারেই রয়ে গেছেন হবিগঞ্জ জেলার ইটভাটা শ্রমিকরা। অধিকার আদায় তো দূরের কথা, এমনকি তারা এদিন সরকার ঘোষিত ছুটিও পাচ্ছেন না।
হবিগঞ্জে ২৩৬টি ইটভাটায় কাজ করছে প্রায় ৪৩ হাজার শ্রমিক। যার মধ্যে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন কম নয় বরং বাড়ছেই।
শ্রম আইন অনুযায়ী দৈনিক ৮ ঘণ্টার স্থানে তাদের কাজ করতে হচ্ছে ১৪-১৬ ঘণ্টা। খুব ভোরে শুরু হওয়া কাজ শেষ হয় সন্ধ্যার পর।
দেশের অন্য জেলার অধিকাংশ ইটভাটা শ্রমিকের মতো তাদেরও দেয়া হয় না কোনো নিয়োগপত্র। দেয়া হয় না ওভারটাইম মজুরি। সাপ্তাহিক কিংবা কোনো ধরনের ছুটি ছাড়াই কাজ করতে হয় টানা পাঁচ-ছয় মাস।
ভাটা এলাকায় নেই থাকার জন্য উপযুক্ত আবাসস্থল। অথচ এসব শ্রমিকের অধিকাংশই বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে এসে কাজ করেন।
এবিষয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মে দিবস বা শ্রমিক দিবস কী, তারা তা জানেন না। জানেন না এদিনের তাত্পর্য কিংবা ছুটির বিষয়েও। প্রতিদিনের মতো এ দিনটিতেও তাদের যথানিয়মে কাজ করে যেতে হয়।
মেঘনা ব্রিকস নামে এক ইটভাটার ম্যানেজার রাসেল মিয়া বলেন, মে দিবসের ছুটির বিষয়ে তিনি জানেন না। দিবসটি সম্পর্কেই তার কোনো ধারণা নেই।
একই ভাটায় কর্মরত এক শ্রমিক থেকে আসা আবুল কাসেম বলেন, একবার কাজে ঢুকলে ছয় মাসের মধ্যে কোনো ছুটি নেই।
হবিগঞ্জ ইটভাটা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মাসুম বলেন, আমরা শ্রমিকদের ছুটির বিষয়ে মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। উল্টো সংগঠন করার দায়ে তারা অনেক শ্রমিককে বিনা নোটিস ও বেতনে চাকরিচ্যুত করেছে। তবে আমরা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাব।
উল্লেখ্য, ১৮৮৬ সালের ৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর হে মার্কেটে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার শ্রমিক। তাদের দাবি ছিল, প্রতিদিনের শ্রমঘণ্টা ৮ ঘণ্টা করা হোক।
তাদের এ সমাবেশের ওপর পুলিশ গুলি চালালে নিহত হন বেশ কয়েকজন। অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের এ আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে 'মে দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।