Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৯ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বোরকা নিষিদ্ধের ঘোষণায় বিপাকে লঙ্কান মুসলিম নারীরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ০১:৫৮ PM
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ০২:০৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


শ্রীলঙ্কায় জরুরি আইনের মধ্যেই নারীদের বোরকাপরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় মুসলমানরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। দেশটিতে ইস্টার সানডেতে সিরিজ বোমা হামলার সপ্তাহখানেক পর এ আইন কার্যকর করা হয়েছে।

শীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলার ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করতে বোরকা নিষিদ্ধ সহায়ক হবে।

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও আঞ্চলিক বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ভালোর চেয়ে খারাপ পরিস্থিতিই বেশি ডেকে আনবে।

রাজধানী কলম্বোর তিনটি হোটেল ও তিনটি গির্জায় ২১ এপ্রিলের ওই সিরিজ বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট।

এক দশক আগে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে ওই হামলা ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী, যাতে ২৫৩ জনের বেশি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক।

বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে ওই লড়াই কোনো ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ছিল না। কিন্তু শ্রীলংকা ও তাদের সিংহলি সংখ্যাগরিষ্ঠদের থেকে আলাদা হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তারাও আত্মঘাতীর পথ বেছে নিয়েছিল।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশীয় পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, তামিল টাইগারদের হামলার পর সেখানকার বেসামরিক লোকজন ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হন। জাতিসংঘের হিসাবে ওই গৃহযুদ্ধের শেষ কয়েক মাসে ৪০ হাজারের বেশি লোককে হত্যা করা হয়েছে।

গাঙ্গুলি বলেন, হামলার পর পুরো তামিল নাগরিকদের সম্মিলিত সাজা দেয়া হয়েছে। অপরাধীদের খুঁজে বের করাই সরকারের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। তাদেরই বিচার করা উচিত। কিন্তু সামগ্রিকভাবে মুসলিম নারীদের শাস্তির মুখে ফেলে দেয়া উচিত হবে না। যদি কেউ তাদের ধর্মচর্চা কিংবা বোরকা পরতে চান, তবে এ ঘটনায় তাদের নিজেদের ঘরের ভেতর আটকে রাখতে হবে।

শ্রীলঙ্কার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ মুসলমান। ইস্টার সানডে হামলার আগে দেশটির মুসলমানদের কোনো সহিংসতার ইতিহাস নেই। যদিও সম্প্রতি বছরগুলোতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের চাপ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন।

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাগ্রসর আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোশুয়া টি হোয়াইট বলেন, বোরকা নিষিদ্ধের এই বার্তা এটাই বলছে- লংকান মুসলমানরা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এতে মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সংশয় তলানিতে চলে যাবে।

এদিকে ইস্টার সানডের হামলার পর সম্ভাব্য প্রতিশোধের আশঙ্কায় শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা হতাশার মধ্যে বাস করছেন। তাদের প্রতি অনলাইনের ঘৃণা ছড়ানো ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। মুসলমানদের বাড়িঘর দোকানপাটের দরজা-জানালায় পাথর ছুড়ে মারা হচ্ছে।

গাঙ্গুলি বলেন, মুসলমানরা সেখানে মারাত্মক চাপের মধ্যে বসবাস করছেন। কাজেই এখন দেশটির নেতৃবৃন্দের উচিত- দায়ীদের শনাক্ত করে বিচার করা। শ্রীলংকার ফের উচিত হবে না এমন একটি রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া, যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ার পর সমালোচনার মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তাব্যবস্থাকে সহায়তা করতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

কিন্তু সমালোচকদের প্রশ্ন- ইস্টার সানডের হামলায় জড়িতদের অধিকাংশই যেখানে পুরুষ, সেখানে নারীদের বোরকা নিষিদ্ধ করে কোনো কার্যকর উপকারিতা পাওয়া যাবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশীয়বিষয়ক পরিচালক ও সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হোয়াইট বলেন, বোরকা নিষিদ্ধকরণ নিয়ে যে বিষয়টি আমাকে বেশি আতঙ্কিত করে, সেটি হচ্ছে- যেখানে সংখ্যালঘুরা ইতিমধ্যে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, সেখানে এবার জননিরাপত্তার কথা বলে তাদের কিছু অধিকার তুচ্ছ করে দেখা হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview