Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘ডিসিশনটা খুব সহজভাবে নিইনাই’ ফেসবুকে শেষ স্ট্যাটাস লিখে আত্মহত্যা

শামসুজ্জোহা পলাশ, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৫:১৪ PM
আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৫:১৪ PM

bdmorning Image Preview


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাস দিয়ে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার উপজেলার ইব্রাহীমপুর গ্রামে রাজিব (১৮) নামে এক কলেজছাত্র আত্মহত্যা করেছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজ বাড়িতে বিষপান করে করে। প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে রাজীবের মারা যায়।

রাজিব চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ও দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের ইব্রাহীমপুর গ্রামের মনির উদ্দীনের ছেলে।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি রাজিবের প্রেমিকার পারিবারিকভাবে অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ায় প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সে মানসিকভাবেভাবে ভেঙে পড়ে। জীবনের ছন্দ হারিয়ে উন্মাদের মত চলাফেরা করায় পরিবারের লোকজনের সাথে তার দূরুত্ব বাড়তে থাকে। ফলে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে কলেজছাত্র রাজিব।

তবে রাজীবের পরিবারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও তার আত্মহত্যার নির্দিষ্ট কোন কারণ তারা জানাতে পারেননি।

বৃহস্পতিবার সন্ধায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজে পিতা-মাতা, ভাই-ভাবী, বন্ধু ও নিকটআত্মীয়-স্বজনসহ সকলকে বিদায় জানিয়ে একটি পোস্ট করেন রাজিব।

রাজীবের বড় ভাই সেই পোস্টটি দেখামাত্র বাড়িতে ফোন করে রাজিবকে খুঁজে বের করতে বলে। কিন্তু তার আগেই অতৃপ্ত হৃদয়ের শূণ্যতা আর হাহাকার থেকে মুক্তি পেতে বিষপান করে কাতরাতে থাকে রাজীব।

ওই অবস্থায় পরিবারের লোকজনসহ প্রতিবেশী তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই রাজীব মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে মরদেহ বাড়িতে আনা হয়।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কলেজছাত্র আত্মহত্যা করেছে সংবাদ পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ রাজীবের লাশ বাড়ি থেকে উদ্ধার করে রাতেই থানায় নিয়ে মর্গে পাঠায়।

মৃত্যুর আগে ফেসবুকে লেখা রাজীবের স্ট্যাটাসটি পাঠকের উদ্দেশ্যে হুবহু তুলে ধরা হলো-

'এটা আমার লাইফের শেষ স্ট্যাটাস। এটা জানি, কথাগুলো শোনার পর অনেকে মানতে পারবে না, আবার অনেকের কাছে ভালো লাগবে শুনে। কিন্তু এটাই হয়ে গেছে সময়ের কাছে বাস্তবতার কাছে। আমি হেরে গেলাম, খুব ইচ্ছে ছিলো আর দশ জনের মতো স্বাভাবিকভাবে জীবন চলানোর, কিন্তু পারলাম না, ডিশিসনটা আমি খুব সহজভাবে নিই নাই। আমাকে বাধ্য হয়ে নিতে হইছে। ডিপ্রেশন আমাকে শেষ করে দিছে। মেন্টালি ফিজিক্যালি কোন ভাবেই আমি ভালো নেই।'

'স্বপ্ন ছিল অনেক, কিন্তু সেটা পূরণ করতে পারলাম না, তার আগেই চলে যেতে হলো। আমাকে মাফ করে দিবেন সবাই, বড় ভাই-ভাবি, মেজো ভাই, ফ্রেন্ডস কারো সাথে যদি কখনো অন্যায় করে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দিয়েন সবাই, আর ফ্যামিলির কথা কি বলবো যদিও সবাই ভুলে যাবে, কিন্তু ফ্যামেলি কখনো ভুলবে না। বাবা-মা, ভাই সবাই আমাকে মাফ করে দিয়ো, ভালো থেকো, তোমরা সব সময়। দোস্ত তোরাই আমার লাইফে একটা বেস্ট পার্সোন ছিলি। সবসময় আমাকে সাপোর্ট করতি ভালো উপদেশ দিতি, কিন্তু আমি শুনি নাই, আজকে যদি তোর কথা গুলো শুনতাম তাহলে আর এইদিন দেখতে হতো না আমার। ভালো থাকিস সবসময় নিজের খেয়াল রাখিস আর আমাকে মাফ করে দিস দোস্ত। ভালো থেকো প্রিয় মা-বাবা। ভালো থেকো প্রিয় মানুষ। ক্ষমা করে দিও আমায়...!!'

'সব শেষ একটা কথা বলে যাই আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, ভালো থাকবেন সবাই আল্লাহ হাফেজ।'

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ বিষয়ে সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

Bootstrap Image Preview