Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রাণে বাঁচতে সৌদি গিয়েও বর্বর নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা মুসলিমরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:২৬ PM
আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:২৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সীমাহীন নির্যাতনের মুখে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে পালিয়ে সৌদি আরবে গেলেও কান্না থামছে না রোহিঙ্গাদের। মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বশীল রাষ্ট্রের ভূমিকায় থাকা এই সৌদিতেই রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের খবর বেরিয়েছে।

অনির্দিষ্টকালের বন্দিত্ব অথবা সৌদি থেকে বের করে দেওয়ার শঙ্কায় অনশনরত রোহিঙ্গাদের ওপর এ নির্যাতন চলছে বলে খবর দিয়েছে মিডল ইস্ট আই নামে একটি সংবাদমাধ্যম। এই খবরে সমালোচনার মুখে পড়েছে রিয়াদ কর্তৃপক্ষ। 

মিডল ইস্ট আই বলছে, সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলে লোহিত সাগর উপকূলের শহর জেদ্দার শুমাইসি বন্দি শিবিরে গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) থেকে অনশন শুরু করেছেন ৬৫০ জন পুরুষ রোহিঙ্গা। গত কয়েকমাসের মধ্যে ওই বন্দি রোহিঙ্গাদের তৃতীয় অনশন এটি।

এই রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই ২০১২ সাল থেকে কোনো ধরনের মামলা বা বিচার ছাড়াই বন্দি রয়েছেন। দীর্ঘদিন বন্দি থাকার কারণে এদের কেউ কেউ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায়ও ভুগছেন।

সৌদি কর্তপক্ষের দাবি, মিয়ানমার থেকে আসা এই রোহিঙ্গারা ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে সৌদিতে কাজের খোঁজে এসেছে। সেজন্য তাদের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

এদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান ও নেপালের পাসপোর্ট বানিয়ে ঢুকেছে সৌদিতে। পরিস্থিতি যতখানি জটিল করা যায়, তারা সে চেষ্টাই করছে। 

সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই বলছে, রোহিঙ্গারা যেখানকার পরিচয় দিয়ে সৌদিতে ঢুকেছে, তাদের সেসব দেশেই পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে রিয়াদ কর্তৃপক্ষ। এজন্য বন্দি রোহিঙ্গাদের রাজি করাতে নানাভাবে চেষ্টা করছে তারা।

মানবাধিকার কর্মীদের শঙ্কা, সৌদির দাবি অনুসারে- যেসব দেশের পরিচয় দিয়ে রোহিঙ্গারা সৌদিতে ঢুকেছে, সেসব দেশ রোহিঙ্গাদের নিতে না চাইলে তাদের ভাগ্যে আরও দুর্ভোগ নেমে আসতে পারে, এই শঙ্কাটাই কাজ ভর করছে অনশনরতদের ওপর।

বন্দি শিবিরে থাকা একাধিক রোহিঙ্গা মিডল ইস্ট আইকে জানান, দাবি থেকে সরে এসে অনশন বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষ ১৫ এপ্রিল বন্দিদের সব বিছানা-কম্বল নিয়ে নেয়। শুরু করে মানসিক নির্যাতন। বিছানা-কম্বল ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা চালানো হচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি)। শেষ তক তাদের বালিশ পর্যন্ত নিয়ে গেছে কর্তৃপক্ষের লোকেরা। আবার কিছু বন্দিকে রাখা হয়েছে ‘তীব্র গরমের কক্ষে’। শাসিয়ে বলা হচ্ছে, অনশন বন্ধ করলেই ওই কক্ষ থেকে বের করা হবে তাদের।

এক রোহিঙ্গা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, না খেতে খেতে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ছি। যতখানি আমাদের দুর্ভোগে ফেলা যায়, তারা ততখানিই করছে। ঠাণ্ডা-গরমে এভাবে নির্যাতন আমরা কতোদিন সইতে পারবো জানি না। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানবাধিকার কর্মীদের পোস্ট করা এক ভিডিওতেও দেখা যায়, ওই বন্দি শিবিরে প্রায় সব বেডেই কম্বল বা বিছানার চাদর নেই। কেবল মেটালে তৈরি খালি বেডগুলো চোখে পড়ছে।

অনশনরত রোহিঙ্গারা মিডল ইস্ট আইকে বলেছেন, তারা এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি চান। তবে তাদের যেন (যে দেশ থেকে এসেছে, সে দেশে) ফিরিয়ে দেওয়া না হয়।

এদিকে, জেদ্দার বন্দি শিবিরে এই নির্যাতনের সমালোচনা করছে রোহিঙ্গা অধিকার সংগঠনগুলো। ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের নেতা ন্য স্যান লুইন এক বিবৃতিতে বলেন, এই রোহিঙ্গারা তাদের মুক্তির দাবিতে তৃতীয়বারের মতো অনশনে বসলো। শিগগির তাদের মুক্তি দিতে হবে। 

সৌদি আরবে বন্দি রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবন-যাপনের বিষয়ে আগেই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ১৯৮২ সালে রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার পর দেশটির সেনাবাহিনী এই জনগোষ্ঠীকে নির্মূলে তখন থেকেই অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের অভিযানের মুখে কয়েক দশক ধরে সৌদি আরবে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

তবে ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনী পুরো জাতিটিকে নির্মূল করতে নৃশংস অভিযান শুরু করলে রাখাইন থেকে পালিয়ে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি।

Bootstrap Image Preview