Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নুসরাত হত্যা: ‘থানা ম্যানেজ করা’ সেই আ’ লীগ নেতা রুহুলের কাছে আমেরিকার ভিসা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:২৫ PM
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:২৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ফেনীর আলোচিত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেকেই জড়িত। মামলার অন্যতম দুই সন্দেহভাজন আসামী নুরুদ্দিন এবং শাহাদত হোসেন শামীম আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে অনেকের নাম উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের নামও রয়েছে।

সরাসরি হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া শাহাদাত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর সে দৌঁড়ে নিচে নেমে উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে বের হয়ে যায়। এর মিনিট খানেকের মধ্যে নিরাপদ স্থানে গিয়ে সে রুহুল আমিনকে ফোনে আগুন দেয়ার বিষয়টি জানায়। সে সময় রুহুল আমিন বলে, আমি জানি। তোমরা চলে যাও।

শাহাদাত বলেছে, নুসরাতের দায়ের করা মামলার পর রুহুল আমিন থানা ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিয়েছিল। এজন্য সে অধ্যক্ষ সিরাজের পরিবারের কাছ থেকে টাকাও নেয়।

নুসরাতের প্রতি নিজেরও ক্ষোভ থাকার কথা উল্লেখ করে শাহাদাত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছে, দেড় মাস আগেও সে নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু নুসরাত তাকে প্রত্যাখান করার পাশাপাশি অপমানও করে। এ কারণে সে নিজেও নুসরাতের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। যার ফলে অধ্যক্ষ সিরাজের নির্দেশে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।

সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসা কমিটির সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি রুহুল আমিন ওরফে গুজা রুহুলের কাছে আমেরিকার ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট রয়েছে। তিনি যাতে আমেরিকা পালিয়ে যেতে না পারেন, তাই তাকে পিবিআইয়ের গোয়েন্দারা কড়া নজরদারীতে রেখেছে।

রুহুল আমিন সম্পর্কে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রুহুল আমিনের চৌদ্দগোষ্ঠী করে বিএনপি। তাকে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি করে দেওয়া হলো। রুহুল আমিন সম্পর্কে বলতে গিয়ে নেতারা আরও বলেন, তার বাড়ি হলো মধ্যম চর চান্দিয়া কুচ্চাখোলা গ্রামে। তার বাবা কোরবান আলী। পাকিস্তান আমলে কোরবান আলী জাহাজে চাকরি নেয়। চাকরির সুবাদে তিনি সিডিসি (নলি) নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরার সুযোগ পান। আমেরিকা পোর্টে জাহাজ ভিড়লে গভীর রাতে কোরবান আলী জাহাজ থেকে পানিতে লাফ দিয়ে পড়ে পালিয়ে ডাঙ্গায় উঠে। এরপর তার ভাগ্যের চাকা খুলতে থাকে। দীর্ঘদিন আমেরিকায় কাজ করে দেশ থেকে তার পরিবার পরিজনের সবাইকে সেখানে নিয়ে যায়।

এর আগে ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

এসব ঘটনায় গত ১১ এপ্রিল রাতে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে নূর উদ্দিন ও ১২ এপ্রিল সকালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে শাহাদাত হোসেন শামীমকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। নূর উদ্দিন নুসরাত হত্যা মামলার ২নং ও শাহাদাত হোসেন শামীম ৩নং আসামি।

সোনাগাজীর চাঞ্চল্যকর নুসরাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ছয় আসামি ছাড়াও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে ৯ এপ্রিল জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সরাফ উদ্দিন আহম্মেদের আদালত নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শহিদুল ইসলামকে পাঁচদিন করে রিমান্ড দেন।

১০ এপ্রিল অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলাকে সাতদিন, আবছার উদ্দিন ও আরিফুল ইসলামকে পাঁচদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন একই আদালতের বিচারক। এছাড়াও, ১১ এপ্রিল উম্মে সুলতানা পপি ও যোবায়ের হোসেনকে পাঁচদিন করে রিমান্ড আদেশ দেওয়া হয়। ১৩ এপ্রিল মামলার আরেক আসামি জাবেদ হোসেনকে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইন।

এদিকে নুসরাত জাহান রাফির বাবা একেএম মুসা ও মা শিরিনা আক্তারসহ দুই ভাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সোমবার সাক্ষাতের সময় শেখ হাসিনা নুসরাতের পরিবারের প্রতি সান্ত্বনা ও গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, দুষ্কৃতকারীরা কেউই আইনের হাত থেকে কোনোভাবেই রেহাই পাবে না। প্রধানমন্ত্রী তাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এসময় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

Bootstrap Image Preview