Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

একটা মেয়ে ওসির রুমে নিরাপদ না হলে কেউ সেই রুমে যাবেন না: ব্যারিস্টার সুমন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:১৫ PM
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:১৫ PM

bdmorning Image Preview


নুসরাত জাহান রাফিকে কোরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। তার শ্লীলতাহানির যে অভিযোগ করা হয়েছিলো অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগ করার পর ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন রাফিকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানার ভিতরে ডেকে নিয়ে আপত্তিকর, অশ্লীল এবং স্পর্শকাতর ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন বলে জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যরিস্টার সায়েদুল হক সুমন।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ এবং ৩১ নম্বর ধারা লঙ্ঘনের দায়ে ততকালীন সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘সাধারণত আমরা দেখতে পাই ওসির নির্দেশে উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। কিন্তু সেই ওসির রুমে যদি একটা মেয়ে নিরাপদ না হয়। তাহলে বাংলাদেশের কেউ আর কোনো ওসি সাহেবের রুমে যাবেন না। এ ধরনের স্পর্শকাতর মামলায় যেখানে ওসি নিজেই চার্জসিট মামলা সম্পর্কে অবগত থাকার পরও নিজের অফিসে বসে তা ভঙ্গ করেন। এই ঘটনা দেখার পর সাধারণ মানুষের আর যাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না।

তিনি আরও বলেন, আমি সাইবার ট্রাইব্যুনালকে বলেছি, যদি এই ওসি কে বিচারের আওতায় না আনা হয়। তাহলে দেশের মানুষের কোনো সমস্যা হলে প্রথমে ওসির কাছে ভয়েই যাবে না। এমন স্পর্শকাতর ভিডিও দেখার পর থেকে মানুষ ন্যায় বিচার, আইনের প্রতি এবং থানার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবি বলেন, সাইবার ট্রাইব্যুনাল আমাদের কথা শুনেছেন । এরপরও আমরা একটা ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করেছি এবং তা পেন ড্রাইভের মাধ্যমে মহামান্য ট্রাইব্যুনালে এ পেশ করেছি। মহামান্য ট্রাইব্যুনাল এটা শোনার পর পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া হবে বলে আমাদের জানিয়েছেন।

এই মামলাটা নুসরাতের পরিবারের কেউ করাটা ভাল হত না? আপনি করাতে দুর্বল হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম না থাকত। তাহলে কিন্তু এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও থাকত না। আর সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলে আমি ব্যারিস্টার সুমন ঢাকা থেকে এই ভিডিও দেখতেও পেতাম না।

তিনি বলেন, একবার শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে নুসরাত। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর ফলে নুসরাত কয়েক লক্ষ বার শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে। আমি মনে করি, এমন অবস্থায় তার পরিবারের চেয়েও আমি ব্যারিস্টার সুমন যদি এই বিচারে থাকি তাহলে পরিপূর্ণ সাহায্য করতে পারব তার পরিবারকে। বড় কথা তার পরিবারের উপর ছেড়ে দিলে তো হবে না। বাংলাদেশের এই যে, অস্থিরতা! থানার সবোর্চ্চ কর্মকর্তা ওসি যখন এমন অপরাধ করে। সেখানে পরিবার পরিবার করে তো লাভ নেই। দেশব্যাপী বিচার চাইবেন আর বিচারের প্রক্রিয়ায় আসবেন না তা তো হবে না। যখন আমরা সবাই মিলে তার পরিবারকে সাহায্য করব তখনি কিন্তু নুসরাতের ন্যায় বিচার পাবে তার বাবা-মা।

এই আইনের যে ধারায় মামলা করা হয়েছে তার শাস্তি কি আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পাঁচ বছর সাজা আছে। তবে আদালত যদি এফআইআর করতে বলেন, তাহলে তিনি একজন ওয়ারেন্টের আসামি। তখন ওনাকে আত্মসমর্পণ করে আদালত থেকে জামিন নিতে হবে।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমি আদালতকে বলেছি। মাইলট, দু’একটা পুলিশ অফিসারের কারণে পুরো ডিপার্টমেন্টকে বদনামের সম্মুখীন হতে দেওয়া যাবে না। কারণ পুলিশ ডিপার্টমেন্টে অনেক ভাল ভাল অফিসার আছে, এদের মতো দু’একজন অফিসারের কারণে ডিপার্টমেন্টের প্রতি মানুষের আগ্রহ কোনো ভাবেই কমতে দেওয়া যাবে না। তাই আমি মনে করি, ততকালীন সময়ে দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক এবং প্রাপ্য শাস্তি দেওয়া হোক।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। এর জেরে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের সহযোগীরা। চলতি মাসের ১০ তারিখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

Bootstrap Image Preview