পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নতুন সাজে সেজেছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। উৎসুক দর্শনার্থীরা উপভোগ করেছে তাদের অনুষ্ঠান, হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন তাদেরকে। আয়োজকদেরও ইচ্ছে এমন সব অনুষ্ঠানে অন্য একজন সাধারণ মানুষের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরাও আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠুক।
বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট মণ্ডলে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ। সহযোগী হিসেবে ছিল উত্তরণ ফাউন্ডেশন। ‘সাংস্কৃতিক শিক্ষায় ডানা মেলুক শিকড়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনায় ছিল রিথিং বাংলাদেশ। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগীয় শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় গীত ও নৃত্য এবং লোকগানের দলসহ মাঠের বাঁশির সঙ্গীত পরিবেশনা থাকছে।
সকালে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহমেদুল কবিরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উত্তরণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও পুলিশের ডিআইজি হাবিবুর রহমান এবং ঢাবির কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব ইসরাফিল শাহীন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান প্রমুখ।
ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গ) সম্প্রদায়ের মানুষদের আমরা ভালো চোখে দেখি না। তারাও যে মানুষ, তাদেরও যে মন আছে, আমরা তা বুঝতে চেষ্টা করি না। সৃষ্টিকর্তা চাইলে আমরাও তাদের মতো হতে পারতাম। তারা আমাদের সমাজের অংশ, আমাদের মতোই মানুষ। তারা পিছিয়ে থাকে না।
তিনি আরো বলেন, এখানে পারফর্ম করেছে এমন দু’জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। এমন ঘটনা বিরল। তারা কাজ করতে পারে, আমাদের সমাজ তাদের কাজের সুযোগ দেয় না। যারা সমস্যা করে তারা সুযোগ না পেয়েই করে থাকে।
ডিআইজি বলেন, সরকার তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমার ভাই, আমার বোন, কে গরিব কে ধনী, সেটা আমরা ভাবি না। মানবতার কথা বলি তখন বলি সবাই সমান। তেমনি তাদেরকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সুযোগ পেলে তারা সবকিছু করে দেখাতে পারে।
আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বিরল এ আয়োজনের জন্য থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগকে ধন্যবাদ জানান। আমাদের অবহেলিত সম্প্রদায়কে নিজেদের উদ্যোগে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।