Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘গরিব বলে বিচার পাবেন না, তাই মীমাংসা করে নেন’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪৫ AM
আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪৫ AM

bdmorning Image Preview


ট্রাক্টরের চাপায় গত বৃহস্পতিবার প্রাণ হারায় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার যুক্তিখোলা গ্রামের কামরুল হাসান জয় (১৭)। দরিদ্র বাবা তাজুল ইসলাম ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করতে গেলে তাকে সমঝোতার মাধ্যমে আপস-মীমাংসার কথা বলা হয়। বলা হয়, গরিব বলে বিচার পাবেন না। এ আশঙ্কায় তিনি রাজিও হয়ে যান ছেলের বাবা। কেননা ট্রাক্টরের মালিক স্থানীয় ব্যবসায়ী হাসান চৌধুরী যথেষ্ট প্রভাবশালী। ছেলের জীবনের বিনিময়ে মাত্র ৮০ হাজার টাকা পেয়ে শান্ত থাকতে হল তাজুল ইসলামকে।

তাও আবার নগদ অর্থে নয়, সমমূল্যের একটি জমি বন্ধক হিসেবে নিতে হয়েছে। জানা গেছে, ব্যবসায়ী হাসান চৌধুরী অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালক কিশোর মিলনকে দিয়ে নিজের ব্রিক ফিল্ডের জন্য ওই ট্রাক্টর চালান। গত বৃহস্পতিবার বেপরোয়া গতিতে চলা সেই ট্রাক্টরে চাপা পড়ে জয়ের মৃত্যু হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা তার দরিদ্র বাবা তাজুলকে চাপ দেন।

পরে বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মনুর মাধ্যমে তা সমঝোতা করা হয়। এ ঘটনায় ট্রাক্টরের মালিক হাসান চৌধুরী ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে নগদ অর্থ না দিয়ে ৬০ শতক জমি বন্ধক হিসেবে তাজুল ইসলামকে দেন তিনি। এর পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই ওই কিশোরের লাশ তড়িগড়ি করে দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে নিহতের বাবা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। বিচার চাইলে কি আর পাব? গণ্যমান্য লোকজন ধরলেন মীমাংসার জন্য। সে কারণেই ময়নাতদন্ত ছাড়াই ছেলের লাশ দাফন করে ফেলেছি।’ তবে ট্রাক্টরের মালিক হাসান চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এক্সিডেন্টে মারা যায়। কার খবর কে রাখে? আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন, তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করেছি। আমি তাকে (নিহতের বাবা) ৮০ হাজার টাকাও দিয়ে দিয়েছি।’ চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মনু বলেন, ‘তারা (বাদী ও বিবাদী) আপস মীমাংসা করায় আমাদের আর কোনো আপত্তি ছিল না বলে দাফন হয়ে যায়।

তবে ৮০ হাজার টাকা নিহতের বাবাকে নগদ দেওয়া হয়নি। হাসান সাহেবের ৬০ শতক জমি বন্ধক হিসেবে দেওয়া হয়। নিহতের বাবা ওই জমি আপাতত চাষাবাদ করবেন।’

লালমাই উপজেলার ভূশ্চি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তোফাজ্জল বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি বা কেউ অভিযোগও করেনি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি স্থানীয়রা নিহতের লাশ দাফন করে ফেলেছে। বিষয়টি তারা নিজেরাই সমঝোতার মাধ্যমে মীমাংসা করেছে বলেও আমাদের জানায়। ওই বৈঠকে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, ট্রাক্টরের মালিক ও নিহতের বাবাও উপস্থিত ছিলেন।’

Bootstrap Image Preview