Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে দেশে নেই কোনো সাপ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৫৩ PM
আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৫৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি দ্বীপ-রাষ্ট্র হল আয়ারল্যান্ড। এর রাজধানী ডাবলিন আয়ারল্যান্ড দ্বীপের সবচেয়ে বড় শহর। আয়ারল্যান্ডের আয়তন সত্তর হাজার বর্গকিলোমিটার। অসংখ্য পাহাড়-পর্বত, কয়েকটি নদী ও হ্রদ নিয়ে গঠিত হয়েছে এই দ্বীপপুঞ্জ। তবে জানলে অবাক হবেন এই দেশে শুধুমাত্র চিড়িয়াখানা বা ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করে রাখা ছাড়া কোনও সাপ নেই। সরীসৃপ বলতে এদেশে রয়েছে শুধু টিকটিকি। তবে আয়ারল্যান্ড সর্পহীন দেশ হওয়ার কারণটা কী?

আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মপ্রচারকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সেইন্ট প্যাট্রিক । আনুমানিক তিনশো পঁচাশি খ্রিষ্টাব্দে উত্তর ইংল্যান্ড অথবা দক্ষিণ স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সে সময় এই অঞ্চলের অধিবাসীরা মূর্তিপূজক ছিল। ষোল বছর বয়সে প্যাট্রিক ডাকাতদলের হাতে অপহৃত হন। তারা তাকে আয়ারল্যান্ডে নিয়ে যায় এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত দাস হিসেবে কাজে লাগায়। এই সময় তিনি খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন।

প্রায় ছয় বছর দাস হিসেবে থাকার পর প্যাট্রিক ফ্রান্সে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি একটি আশ্রমে পড়াশোনা করেন এবং এরপর আয়ারল্যান্ডে ফিরে এসে সেখানকার অধিবাসীদেরকে খ্রিস্টধর্মের প্রতি আহ্বান জানাতে থাকেন। পূর্ব নাম ছিল মেউইন সুকাট। আয়ারল্যান্ডে আসার পর তিনি খ্রিস্টান নাম প্যাট্রিসিয়াস গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে প্যাট্রিক হিসেবে পরিচিত হন। তিনি আয়ারল্যান্ডের বিশপ হিসেবেও নিযুক্ত হন।

আইরিশ রূপকথা অনুযায়ী, আয়ারল্যান্ডে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করার পাশাপাশি সেখান থেকে সব সাপ তাড়িয়ে দিয়েছিলেন সেন্ট প্যাট্রিক। চল্লিশ দিনের জন্য উপবাস করে তপস্যা করতে একটি পাহাড়ে ওঠার সময় সাপের ছোবল খান তিনি। এরপরেই সেখান থেকে সাপ নির্মূল করার সিদ্ধান্ত নেন। যেখানে যত সাপ ছিল তাদের তাড়া করে একটি শৈলচূড়ার উপর থেকে সমুদ্রে ফেলে দেন। তার পর থেকে আয়ারল্যান্ডে আর কখনো সাপ দেখা যায়নি।

ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আয়ারল্যান্ডের প্রাকৃতিক ইতিহাস বিষয়ক গবেষক নাইজেল মোনাগান জানান, আয়ারল্যান্ডে সাপের ফসিলও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই এ অঞ্চলে কোনো সাপ ছিল না। শুধু আয়ারল্যান্ড নয় নিউজিল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, আন্টার্কটিকাতেও সাপের তেমন একটা দেখা মেলে না। এমনকি আগে গ্রেট ব্রিটেনেও কোনও সাপ ছিল না। পরবর্তীকালে তিনটি প্রজাতির সাপের দেখা মেলে। এরা হল গ্রাস স্নেক, অ্যাডার স্নেক এবং স্মুথ স্নেক।

আয়ারল্যান্ডে সাপ না থাকার বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রায় দশ হাজার বছর আগে তুষারযুগে বরফে ঢাকা ছিল আয়ারল্যান্ড। বরফযুগে আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড এতটাই হিমশীতল ছিল যে সাপের মতো কোনও ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণীর বসবাসের উপযোগী ছিল না এই দেশ দুটি। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে চারপাশের বস্তু থেকে তাপ গ্রহণ করতে হয় সাপের। বরফে ঢাকা আয়ারল্যান্ডে তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য তা সম্ভব ছিল না। এর পরবর্তী সময়ে হিমবাহ গলতে শুরু করলে, মানসাগর দ্বারা ব্রিটেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। সেই সময় ব্রিটেনকে বাসস্থান হিসেবে বেছে নেয় কয়েকটি প্রজাতির সাপ।

লুইসিয়ানা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান কেন্দ্রের লুইসিয়ানা পয়জন সেন্টারের পরিচালক মার্ক রায়ান এ বিষয়ে বলেছেন, আয়ারল্যান্ডে কোনও সাপ নেই কারণ সেখানকার জলবায়ু তাদের বসতি গড়ে ওঠার পক্ষে অনুকূল নয়। যে সরীসৃপ প্রজাতিটি আয়ারল্যান্ডে বসতি গড়ে তোলে তারা হলো টিকটিকি। আয়ারল্যান্ডে যে প্রজাতির টিকটিকি দেখা যায় তাদের কোনও পা নেই। ফলে অনেকেই এই টিকটিকিকে সাপ বলে ভুল করেন।

তবে আগে ছিল না বলেই যে ভবিষ্যতে আয়ারল্যান্ডে কখনও সাপের আবির্ভাব ঘটবে না, সেটা নিশ্চিত করা বলা যায় না। নব্বইয়ের দশক থেকে অনেক আইরিশ শৌখিন ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে সাপ কিনে এনে চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর অনেকে সেই সব সাপ বনে-জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছেন। এসব সাপ হয়তো বংশবিস্তার করে এক সময় আয়ারল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করতে পারে।

তবে গবেষক মোনাগানের মতে, সেটা আয়ারল্যান্ডের জন্য খুবই বিপজ্জনক হবে। তার মতে, আয়ারল্যান্ডের মতো বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোতে বহিরাগত কোনও নতুন প্রজাতির প্রাণীকে জোর করে বংশবিস্তার করানোর চেষ্টা কখনোই ঝুঁকিমুক্ত নয়। এর ফলে দ্বীপটির অন্যান্য কীটপতঙ্গ এবং গাছপালা অস্তিত্বের সংকটে পড়তে পারে।

Bootstrap Image Preview