Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চিঠি দিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছাত্রীদের

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০১:৩২ PM
আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০১:৩২ PM

bdmorning Image Preview


নাটোরে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী ওই বিভাগের এক শিক্ষকের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় যৌন হয়রানি থেকে মুক্তি ও নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে নাটোর প্রেসক্লাব ও বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ওই কলেজের ছাত্রীরা।

চিঠিতে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকের প্রাইভেট বাণিজ্যের আড়ালে যৌন হয়রানি এবং তা ধামাচাপা দিতে অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্রনেতাদের জোর ভূমিকার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কলেজে নিজেদের ‘অনিরাপদ’ দাবি করে চিঠিতে অভিযুক্ত শিক্ষক ছাড়াও শিক্ষকদের লালসা থেকে ছাত্রীদের বাঁচাতে আকুতি জানিয়েছেন তারা।

গত বৃহস্পতিবার রাতে চিঠিটি স্থানীয় সাংবাদিকদের হাতে পৌঁছালে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। তবে চিঠিতে তারিখ হিসেবে ১০ই এপ্রিল উল্লে­খ আছে।

চিঠিতে ছাত্রীরা লিখেছে, ‘আমরা নাটোরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এন এস সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী হয়েও অনিরাপদ বোধ করছি, যার কারণ আমাদের বিভাগের শিক্ষকরা। শিক্ষকদের প্রাইভেট বাণিজ্যের শিকার হয়ে নিজেদের সম্ভ্রম অক্ষুণন্ন রাখতে ব্যর্থ হচ্ছি। শিক্ষকদের নিকট প্রাইভেট না পড়লে লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া হয় বলেই তাদের কাছে পড়তে যেতে বাধ্য হই। আর পড়তে গিয়ে হই সম্মানহানির শিকার। কয়েকদিন আগে আমাদের এক সহপাঠী বিভাগীয় প্রধান কাজী ইসমাইল স্যারের লালসার শিকার হয়েছে। স্যার ক্লাসের ফাঁকে তাকে ডেকে নিয়ে মোবাইলে কু-প্রস্তাব দেয় ও ফেসবুকে নোংরা কথা লিখেন। বিষয়টি জানাজানি হলে স্যার তাকে কলেজে আসতে নিষেধ করে। সে অভিযোগ জানাতে এলে তাকে অন্য এক শিক্ষক তাড়িয়ে দেন। ওই ঘটনা যারা জানত, তাদেরও ধমক দেন তিনি। বাইরে কোন কথা প্রকাশ হলে কঠিনতর শাস্তির হুমকিও দেন তিনি।

চিঠিতে আরো বলা হয়, আমরা শুনেছি বিষয়টি জানাজানি হয়েছে এখন তাই আমাদের সহপাঠীকে মাস্তানদের দ্বারা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এর আগেও এক বড় আপুকে বিভাগের এক শিক্ষক যৌন হয়রানি করে যা প্রকাশ হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে ওই শিক্ষককে বদলী করে দেয় অনত্র। এখন আমরা ক্লাসে যেতে ভয় পাচ্ছি। দিন দিন স্যাররা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ছাত্রনেতারা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে তাই তাদের বলেও কোন বিচার পাচ্ছি না। স্যাররা পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের শরিফ স্যার সব জানেন এবং তিনি ইসমাইল স্যারের পক্ষ নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিচ্ছেন। স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়তে গিয়েও নিরাপত্তা নেই। আমরা নিরাপদ কলেজ চাই।

অপরদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষক কাজী ইসমাইল হোসেন ছুটি নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে গেছেন বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার সেলফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সামসুজ্জামান বলেন, একজন ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে বলে শুনেছি। বৃহস্পতিবার স্থানীয় বিজ্ঞান মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় কলেজে কি হয়েছে তা জানি না। তবে ছাত্রীরা অভিযোগ করলে প্রয়োজনে কমিটি করে পুরো ঘটনা তদন্ত করা হবে। আর দোষ প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা পুলিশ সুপার সাইফুলাহ আল মামুন বলেন, কলেজের একটি বিভাগের ছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতার বিবরণ দিয়ে লেখা চিঠির ব্যাপারে জেনেছি। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। সেই সাথে ভিকটিম বা ছাত্রীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা পুলিশকে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে ছাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে জেনেছি। নিজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীরা নিরাপদ বোধ না করা মানে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হওয়া। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview