Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘জানাযার মাঠেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল নুসরাতের হত্যাকারীরা’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪৪ PM
আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জানাযার মাঠেই অপরাধীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার এবং আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেনীর সোনাগাজী মো. সাবের সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা-পূর্ব বক্তৃতায় তিনি বলেন, নুসরাত পুরো বাংলাদেশের একটি প্রেরণার নাম। নুসরাত দেখিয়ে গিয়েছে কিভাবে প্রতিবাদ করতে হয়।

নাসিম বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের আসামিরা যদি ৪০ হাত মাটির নিচেও থাকে, তাদের সেখান থেকে বের করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এই ছাত্রীর আত্মার মাগফেরাতও কামনা করেন আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

নুসরাত জাহান রাফির জানাজায় বোনের জন্য ক্ষমা চাইলেন বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। জানাজা-পূর্ব বক্তব্যে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দেশবাসীর কাছে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন হাসান নোমান।

তিনি বলেন, পাঁচদিন ধরে সারাদেশের মানুষ আমার বোনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা বোনকে সুস্থ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। দেশবাসীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তবে আমার বোনের হত্যাকারীদের বিচার চাই।

নুসরাতের বাবা মাওলানা মাওলানা এ কে এম মুসা বলেন, আমার মেয়ের আত্মা তবেই প্রশান্তি পাবে, যদি সে সুবিচার পায়। আমি আমার মেয়ের হত‌্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সোনাগাজী সাবের পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে নুসরাতের মরদেহ দাফন করা হয়। জানাজায় ইমামতি করেছেন নুসরাতের বাবা মাওলানা একেএম মুসা।

চোখের পানিতে বুক ভিজিয়ে নুসরাতকে কবরে শায়িত করেন বাবা মাওলানা মুসা মানিক ও বড় ভাই নোমানসহ আত্মীয়-স্বজনরা। এ সময় কবরস্থান এলাকায় তৈরি হয় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। নুসরাতের বাবা ও ভাইয়ের চোখের পানিতে ভিজে যায় কবরের মাটি।

এর আগে সকাল থেকে আত্মীয়-স্বজনসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে নারী-পুরুষ তাদের বাড়িতে ভিড় জমান। বিকেল ৫টায় সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের বাড়িতে নুসরাতের মরদেহ পৌঁছালে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এত মানুষের ঢল শুধু নামাজের জানাজায় অংশ নেয়াই উদ্দেশ্য নয়। এটা এই জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদও বটে। মাঠে উপস্থিত হয়েছেন, নুসরাতের বাবা-ভাইসহ স্বজনরা। নামাজের আগে বক্তব্য দেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন।

নুসরাতের বাবা একেএম মুসা, মা শিরিনা আক্তার, বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান, ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বার বার মূর্ছা যান। নুসরাতের মরদেহ একনজর দেখতে সকাল থেকে অপেক্ষা করা মানুষের চোখে ছিল পানি।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নুসরাতের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। পরে সেখানে উপস্থিত আত্মীয়-স্বজনসহ আগতদের মরদেহ না দেখিয়ে সোনাগাজী সাবের পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয়।

সেখানে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জানাজা-পূর্ব কার্যক্রম শুরু করেন সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন।

এ সময় বক্তব্য রাখেন ফেনী ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান, পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিকেএম এনামুল করিম, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রহমান বিকম, সোনাগাজী উপজেলার চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিফটন, সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ, নুসরাতের বাবা একেএম মুসা ও বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

এর আগে গত বুধবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে মারা যান নুসরাত। বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নুসরাতের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তার মরদেহ নিয়ে ফেনীর উদ্দেশে রওনা হন স্বজনরা।

গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। ওইদিন নুসরাতকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে নিয়ে বোরখাপরা চারজন তাকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

Bootstrap Image Preview