Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘রাজি না হওয়ায় আমার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ছাত্রীরা’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৫৩ PM
আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৫৩ PM

bdmorning Image Preview


সোনাগাজীতে যৌন হয়রানির অভিযোগ করায় ছাত্রীকে (১৮) পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একই মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন ও আহতের সহপাঠী আরিফুল ইসলামকে আটক করেছে।

শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে মাদরাসার ছাদে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

আহত ওই ছাত্রীর একটি অডিও রেকর্ড গণমাধ্যমে এসেছে। রেকর্ডে ওই ছাত্রী জানান, সকালে আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে যান তিনি। মাদরাসায় পৌঁছালে এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারছে বলে ডেকে নেয়। সেখানে আরও চার-পাঁচজন মুখোশধারী ছাত্রী ছিলেন। তারা বলেন, প্রিন্সিপালের ওপর যে অভিযোগ করেছিস তা মিথ্যা, বল। আমি বলি না, আমি যা বলেছি সব সত্যি। তারা বলে, তোকে এখনই মেরে ফেলবো। আমরা তোর সব খবর নিছি। তোর প্রেম সম্পর্কিত সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমি বলি, আমি সব সত্য বলেছি। আমি শিক্ষকদের সম্মান করি, কিন্তু যে শিক্ষক আমার গায়ে হাত দিছে আমি তার প্রতিবাদ করেছি। সঙ্গে সঙ্গে তারা আমার হাত-পা ধরে গায়ে আগুন দেয়।

পরে তার চিৎকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরবর্তীতে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান। দগ্ধ ছাত্রীর বাড়ি সোনাগাজী পৌরসভার চরচান্দিয়া গ্রামে। তিনি এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

খবর পেয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান ও পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ ও সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) সাইফুল আহমেদ ভূঞাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে গিয়ে তার চিকিৎসার খবর নেন।

ওই ছাত্রীর বড় ভাই জানান, অধ্যক্ষ মাওলানা এএসএম সিরাজ উদ্দৌলা তাকে (ছাত্রী) যৌন হেনস্থা করে। পরে থানায় আমরা মামলা দিলে অধ্যক্ষ আটক হলে তার লোকজন তা তুলে নিতে চাপ দেয়। এর আগেও অধ্যক্ষ একাধিকবার তাকে যৌন হেনস্থার চেষ্টা করে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, ঘটনার সময় তিনি মাদরাসার অফিস কক্ষে প্রশ্নপত্র পাঠানোর কাজ করছিলেন। চিৎকার শুনে বেরিয়ে এসে দগ্ধ অবস্থায় এক পরীক্ষার্থীকে দেখতে পেয়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান।

এ ঘটনায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক ও কর্মচারী কেউ কথা বলতে রাজী হননি। তবে শিক্ষার্থী হত্যা চেষ্টায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, অপরাধী যেই হোক না কেন, তাকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান তারা।

সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, পুলিশ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে যৌন হেনস্থার ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেছে বলে তিনি জানান।

এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে সোনাগাজী মাদরাসাসহ আশপাশের এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন এবং পৌর কাউন্সিলর মাকসুদুর রহমান মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলার পক্ষে অবস্থান নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে মানববন্ধন করেন।

অন্যদিকে স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ আবদুল হালিম মামুন ও মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিবাকরা মিলে শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন। এর আগেও ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ একাধিক অভিযোগে ওঠে।

Bootstrap Image Preview