Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কৃষি বিভাগের অবহেলায় লোকসানে আত্রাইয়ের ভুট্টা চাষিরা

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ০১:০২ PM
আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ০১:১৫ PM

bdmorning Image Preview


শস্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় বহুবছর ধরে আলু ও সরিষা ঘরে তোলার পরপরই জমিতে ভুট্টার আবাদ করে আসছেন কৃষকেরা।

ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এই আবাদ উপজেলা জুড়ে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ভুট্টা ক্ষেতে 'ফল আর্মি ওয়ার্ম' নামে ফসল বিধ্বংসী নতুন এক পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার প্রায় প্রতিটি মাঠে। কীটনাশক দিয়েও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। দ্রুত প্রতিরোধ করা না গেলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে কৃষক এমনটাই ধারণা করছেন তারা।

এদিকে কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে না কৃষকেরা। কৃষি কর্মকর্তাদের বার বার বলা সত্ত্বেও তাদের কোনো সহযোগিতা না পেয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এমনটাই অভিযোগ কৃষকদের। ফলে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের জাতোপাড়া, ভোঁপাড়া ইউনিয়নের মহাদিঘী, হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের কিছু অংশ, আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের শুটকিগাছা, বেওলা, চৌবাড়ি, পাঁচুপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার ভুট্টা ক্ষেতে আর্মি ওয়ার্মের আক্রমণের দৃশ্য দেখা গেছে।

গাছের পাতা থেকে শুরু করে কান্ড পর্যন্ত খেয়ে ফেলছে এ পোকা। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ক্ষেতের পরিমাণ। শত শত হেক্টর ফলস নষ্ট হতে চলেছে। কোনো প্রতিষেধক কাজে আসছে না বলে দাবি করছেন চাষিরা। পরিণতি বয়সের একটি পোকা অসংখ্য বাচ্চা দেয়। দিনে গাছের কান্ড ও মাটিতে থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে ছড়িয়ে পড়ে পুরো গাছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কীটনাশক দিয়ে এ পোকা দমন সম্ভব নয়। পোকার আক্রমণ শনাক্ত করা গেলে প্রতিরোধ করা যেতে পারে বলছেন কর্মকর্তারা। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবে, ভুট্টা আবাদ লাভজনক হওয়ায় উপজেলায় এবার লক্ষমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাষ হয়েছে ৫১ হাজার হেক্টর জমি। তবে 'ফল আর্মি ওয়ার্ম' দমন করা না গেলে বড় ক্ষতি হবে কৃষকের। 

এ ব্যাপারে উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের জাতোপাড়া গ্রামের কৃষক মুনির হোসেন বলেন, আমারা কৃষক, ফসলই আমাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। আর এ ফসল যদি 'ফল আর্মি ওয়ার্মে'র কারণে নষ্ট হয় তাহলে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হব। এ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলেও জানান তিনি। 

এ ব্যাপারে ভোঁপাড়া ইউনিয়নের মহাদিঘী গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের ফসলের এত বড় ক্ষতি হচ্ছে তারপরও এখন পর্যন্ত কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা পাচ্ছি না। নিজেরাই কিছু কিটনাশক দিয়ে এ পোকার হাত থেকে বাঁচতে চেষ্টা করছি। 

এছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম কাউছার হোসেন জানান, 'ফল আর্মি  ওয়ার্ম' পোকার আক্রমণ কিছু কিছু এলাকার কৃষকদের অভিযোগ পেয়েছি। কৃষি কর্মকর্তারা সব সময়ই কৃষকদের পরামর্শ দেন। যদি কোন কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব অবহেলা করে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই পোকা আমাদের এলাকায় এই প্রথম দেখা দিয়েছে। ফল আর্মি ওয়ার্ম পোকার আক্রমণে দেরিতে চাষ করা ভুট্টার ক্ষেতে দেখা গেছে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলার সচেতন মহল প্রতিটি আবাদের ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধান বাড়ালে এবং সঠিক সময়ে কৃষকদের পরামর্শ দিলে লোকসানে পড়বে না কৃষক। এছাড়াও উৎপাদিত শস্য স্থানীয় বাজারগুলোর চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করতে পারবে দেশের অন্যান্য জেলায়।

Bootstrap Image Preview