Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘থাক, কী করবি, শার্টটাই তোর মেয়েকে পরা’

নারী ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:০০ PM
আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:০০ PM

bdmorning Image Preview


নানা কার কাছে যেন খবর পেলেন, তাঁর মেয়ের ছেলে হয়েছে। নানা একটি কমলা রঙের শার্ট নিয়ে মায়ের কাছে হাজির। এসেই বললেন ‘নে, এটা তোর ছেলেকে পরা।’ কিন্তু মা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, নাতি নয়, তৃতীয়বারের মতো তাঁর নাতনি হয়েছে। নানা বললেন, ‘থাক, কী করবি, শার্টটাই তোর মেয়েকে পরা। দেখিস, একদিন তোর এই মেয়েই ছেলের মতো বড় হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে।’

শৈশবে মায়ের কাছে বারবার শোনা এই গল্প বলছিলেন গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনা আকতার। ২০১৬ সাল থেকে তিনি এ দায়িত্বে আছেন।

অন্যদিকে বেশ কয়েক মাস আগে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ফাতেমাতুজ জোহরা। অর্থাৎ উপজেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ের দুটি চেয়ারে থাকা দুজন নারী কর্মকর্তা সামলাচ্ছেন এ উপজেলা। সম্প্রতি কথা হয় এ দুই নারী কর্মকর্তার সঙ্গে।

রেহেনা আকতারের বাবা আলাউদ্দিন আহমেদ ভুইয়া ছিলেন সামরিক কর্মকর্তা। মা হেলেনা সরকার ছিলেন গৃহিণী। তিনি বলেন, ‘বাবা আমাদের মেয়ে হিসেবে বড় করেননি, সন্তান হিসেবে বড় করেছেন।’

রেহেনা আক্তারের মতে, সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা আনার জন্য বর্তমানে একমাত্র বাধা হলো ‘দৃষ্টিভঙ্গি’। রেহেনা জানালেন, কাজ শেষে বাসায় ফিরে ছেলেকে সময় দেন। রান্নাবান্না করে পুরো পরিবার নিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় কাটান। রেহেনা বলছিলেন, ‘চাকরিটা বিয়ের পরে হয়েছে। স্বামীর সহযোগিতা না পেলে চাকরিটা করা হতো না।’

রেহেনা একদিনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে পুরো উপজেলায় দুই লাখ গাছের চারা রোপণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নিজ হাতে লেখা যুদ্ধকালীন স্মৃতি সংকলন নিয়ে প্রকাশ করেন ’বিজয় গাথা’ নামের একটি প্রকাশনা। তৈরি করেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্কুল। প্রথমবারের মতো শিল্পকলা একাডেমি স্থাপন, ছিন্নমূল মানুষের গুচ্ছগ্রামে বাউল দল গঠন, বজ্রপাত মোকাবিলায় উপজেলাজুড়ে এক লাখ তালের চারা রোপণ, প্রতিটি ইউনিয়নে ‘গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্স’ চালু, প্রথমবারের মতো স্থানীয় ঐতিহ্য কাঁঠালের ভাস্কর্য স্থাপন, কাঁঠালকে উপজেলায় ব্র্যান্ডিং করা, কৃষকের ধানের খেতে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে নবান্ন উৎসবসহ বিভিন্ন কার্যক্রম তিনি পরিচালনা করেন। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এসব কার্যক্রম মানুষের নজর কাড়ে।

কুড়িগ্রামের মেয়ে শ্রীপুরের বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমাতুজ জোহরা। জীবনে কোনো বৃত্তি থেকে বাদ পড়েননি তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পূর্ণ সিজিপিএসহ স্নাতক ও স্নাতক সম্মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও পদক দিয়েছে তাঁকে।

ফাতেমাতুজ জোহরার প্রথম পেশা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা। চাচার পরামর্শে তিনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রশাসনে যোগ দেন। রাজশাহী ও গাজীপুর জেলা প্রশাসন হয়ে বর্তমানে শ্রীপুরে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বামী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বর্তমানে মিশনে আছেন। ফাতেমাতুজ জোহরার বাবা খাইরুল ইসলাম মারা গেছেন। তিনি ছিলেন ব্যাংকার। মা হুরে জান্নাত গৃহিণী, তিনিই ফাতেমাতুজ জোহরার মেয়েকে সামলাচ্ছেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের মতে, শ্রীপুরে এই দুই নারী কর্মকর্তা পুরুষদের চেয়ে ভালো কাজ করছেন।

Bootstrap Image Preview