Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বুধবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বৃক্ষ নিধনের চাপে হারিয়ে যাচ্ছে তাল গাছ

সাইফুল ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৬:০১ PM
আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৬:০১ PM

bdmorning Image Preview


তাল একটি সুপরিচিত ফল। এটি দীর্ঘজীবী বৃক্ষ। তালের আদি নিবাস মধ্য আফ্রিকা হলেও নরসিংদীর কিছু কিছু স্থানে ছোট-বড় তালগাছ চোখে পড়ে। গুচ্ছমূলী বৃহৎ অশাখা বৃক্ষ তাল, গাছের গোড়ার দিক মোটা, ওপরের অংশ তুলনামূলক চিকন, কাণ্ডের মাথায় বোঁটা ও পাতা গুচ্ছভাবে সাজানো থাকে ও বোঁটার দুই ধারে করাতের মতো দাঁত আছে। বোঁটা শক্ত ও পুরু।

গাছ উচ্চতায় ২০ থেকে ২৫ মিটার হয়ে থাকে এবং দীর্ঘজীবী উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম তাল। ১৪০ থেকে ১৫০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকে এই গাছ। তুলনামূলকভাবে রোগ-বালাই কম। তাল পুরুষ বা স্ত্রী যে কোনো এক ধরনের হয়। গাছ উভয় লিঙ্গ নয়, একই গাছে দুই রকম ফুল ফোটে না। 

গাছ প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। তবে এর পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। গাছে কাঁদিতে ফল ধরে, একটি গাছে অনেক কাঁদি ধরে, ফলের আকার গোলাকার চ্যাপ্টা, প্রতি ফলের গড় ওজন ১ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত হয়, ফলের রং প্রথমে হলদে সবুজ, পরিপক্ব ফলের রং হলুদ, খয়েরি কালো রঙের হয়। 

তালে এক থেকে দুটি বা তিনটি আঁটির ধরতে দেখা যায়। ফল পাকে ভাদ্র মাসে, তবে কোনো কোনো গাছে বছরের অন্য সময় ফল ধরতে দেখা যায়। পাকা ফলের ঘ্রাণ তীব্র সুগন্ধযুক্ত, স্বাদে মিষ্টি থেকে পানসে মিষ্টি হয়। গাছে পাকা তাল আপনা-আপনি ঝরে পড়ে। 

সাধারণত গ্রীষ্মের মৌসুমে ফলে তাল। তালফল ও তালগাছের বহুবিধ ব্যবহার ও পুষ্টি গুণাগুণ বিবেচনায় দেশিয় ফলের মধ্যে তালের অবদান শীর্ষে। তালের পাতা দিয়ে হাতপাখা, মাদুর, টুপি, ঘরের ছাউনি, চাটাই, ছাতা, লাকড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এমনকি তালগাছের কাঠ দিয়ে ঘরের রোয়াও দেওয়া হয়। 

পুরুষ গাছের ফুল বা জটা থেকে রস সংগ্রহ করে তা দিয়ে গুড়, পাটালি, ভিনেগার, পিঠা, বড়া, লুচি, সডিনগাছ তৈরি করা হয়। পাকা তালের রস দিয়ে পিঠা, বড়া, ক্ষীর, পায়েস তৈরি করা হয়। কচি ও কাঁচা তালের নরম শাঁস মুখরোচক পুষ্টিকর ও ছোট-বড় সবার প্রিয়। গ্রীষ্মের তৃষ্ণা নিবারণে কাজ করে। 

তাল ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার, তালের রস শ্লেস্মানাশক, মূত্র বর্ধক, প্রদাহ ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিবারণ করে। রস থেকে তৈরি তালমিছরি সর্দি-কাশিতে মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। 

অজ্ঞতা ও দৈনন্দিন বিভিন্ন চাহিদার কারণে দিন দিন যেভাবে তালগাছ নিধন করা হচ্ছে। এতে প্রকৃতি পরিবেশ হারাচ্ছে তার রূপ সৌন্দর্য। নয়নাভিরাম সারি সারি তালগাছ, গাছে গাছে তালফল ও তালগাছে পাখির বাসা আজ তেমন দেখা যায় না।

প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ মৌসুমে অন্যান্য বৃক্ষ চারার সঙ্গে যদি তালগাছের চারা বেশি বেশি রোপণ করি এবং নির্বিচারে তালগাছ নিধন না করি তবে আমাদের এ দেশে আবারো উপকারী ফল তাল ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য।  
 

Bootstrap Image Preview