Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ রবিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

৪০০ কোটি টাকার বিজিএমইএর 'পরিত্যক্ত' ভবনটির ভবিষ্যৎ কি ?

অধরা ইয়াসমিন
প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০১:২৯ PM
আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২২, ০৪:০৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


তৈরি পোশাক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর উত্তরার নতুন ভবন গতকাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যদিয়ে রাজধানীর হাতিরঝিলে আলোচিত বিজিএমইএ ভবনটি ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।

বিজিএমএই নেতারা বলেছেন, আদালতের নির্দেশমতো ১২ এপ্রিলের মধ্যে ভবন ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পরবর্তী তিন দিন সরকারি ছুটি থাকায় নতুন ভবন থেকে সব ধরনের কার্যক্রম পুরোদমে চালু হবে ১৫ এপ্রিল। তবে এ ভবন কবে ভাঙা হবে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান  গতকাল বলেন, কবে কীভাবে হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙা হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

পুরনো বিজিএমইএ ভবনের কী হবে, এ নিয়ে নানা আলোচনা আছে। মালিকানা ছেড়ে দেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে সেবামূলক কোনো কাজে ভবনটি ব্যবহার করা যায় কি-না এ রকম বিকল্প ভাবনা আছে বিজিএমইএ নেতাদের মধ্যে। বিকল্প ব্যবহার হিসেবে শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা নিয়েও আলোচনা আছে। একাধিক উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ রকম ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

তবে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, এ রকম কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা মতে এ রকম কিছু করার সুযোগ নেই।

ভূমির মালিকানা স্বত্ব না থাকা এবং ইমারত বিধিমালা ও জলাধার আইন ভঙ্গ করার দায়ে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনকে অবৈধ ঘোষণা করে এটি ভেঙে ফেলার রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিজিএমইএ। হাইকোর্টের দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও বহাল রাখে। পরে ভবন ভাঙতে আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। দুই দফা বৃদ্ধির পর তৃতীয় দফায় আগামী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেন সর্বোচ্চ আদালত।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একাধিক উদ্যোক্তা বলেছেন, আদালতের প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখিয়ে হাতিরঝিলের ভবনটির মালিকানাসহ সব ধরনের স্বত্ব তারা ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে ভবনটিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নিয়ে কোনো কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করলে তারা খুশি হবেন। এতে সম্পদের অপচয় হবে না। দুই লাখ ৬০ হাজার বর্গফুটের ১৫ তলাবিশিষ্ট ভবনটির জমি এবং নির্মাণ ব্যয় মিলে বর্তমান মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। ভবনের প্রথম দুই তলার অবকাঠামোতে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে হাতিরঝিলের পানির প্রবাহ এবং সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রেখেই ভবনটিকে মানবকল্যাণে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে তারা মনে করেন।

আগামী ৬ এপ্রিল বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল থেকেও এ রকম ভাবনার কথা জানানো হয়েছে। গত ২১ মার্চ স্বাধীনতা পরিষদের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্যানেলপ্রধান জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান রেখেই বিজিএমইএ ভবনটি ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে রাষ্ট্র্রীয় সম্পদ হিসেবে ভবনটির ব্যবহার নিয়ে বিকল্প ভাবনা আছে তার প্যানেলের। এই ভবন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লেজার শো হতে পারে।

অন্যদিকে পোশাক খাতের শ্রমিক নেতারা ভবনটিকে শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে দেখতে চান। পোশাক শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ নেতা জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ও কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, 'আদালতের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, মানবিকতার আদালতের ওপর বড় কোনো আদালত নেই।' মানবিক কারণে দরিদ্র শ্রমিকদের জন্য যদি ভবনটিকে বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেটাই হবে সর্বোত্তম ব্যবহার। আইন তো মানুষের কল্যাণেই।

এদিকে কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাতিরঝিলের নান্দনিকতা বাড়াতে এখানে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর করা যেতে পারে। যেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে লেজার শোর মাধ্যমে বিনোদনের আয়োজন করা হতে পারে।

তবে এসব ভাবনার আর কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন বিজিএমইএর ভবন সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্টের অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ জানান, ভবন ভেঙে ফেলতে আদালতের নির্দেশের পর এ রকম কোনো সুযোগ আর নেই। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশ হচ্ছে, ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে। সেটাই শেষ কথা। ভবন ভেঙে ফেলতে আদালতের রায়ের পর বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছে। মুচলেকা দিয়ে বলা হয়েছে, তারা ১২ এপ্রিলের পর ভবনে থাকতে আর সময় চাইবেন না। সেখানে শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার কিংবা আরও মানবিক কোনো কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। তিনি জানান, ১২ তারিখের পর যে কোনো দিন ভবনটি ভেঙে ফেলতে প্রস্তুত রাজউক। তবে ভাঙার খরচ বিজিএমইএ বহন করবে।

কী আছে এই ১৫ তলা ভবনে?

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, এই ভবনটিতে রয়েছে দুটি কমার্শিয়াল ব্যংক। রয়েছে ১টি বীমা প্রতিষ্ঠান, একটি অডিটরিয়াম, রয়েছে সুইমিং পুলসহ একটি ক্লাব। আরও রয়েছে বেসরকারি কয়েকটি অফিসসহ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ভবনের নিচে দু’টি বেইজমেন্টে কম পক্ষে ২শ গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা ছিল। ২টি বেইজমেন্ট থেকে ওপরে উঠে দৃশ্যমান গ্রাউন্ড ফ্লোরে (নিচ তলা) রয়েছে বিজিএমইএ-এর নিজস্ব সাব স্টেশন। যেখানে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক হাইভোল্টেজ জেনারেটর। রয়েছে অভ্যর্থনা কেন্দ্র। ২য় তলায় রয়েছে বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকের কাওরানবাজার শাখা কার্যালয়। এই তলায়ই রয়েছে বিজিএমইএ-এর নিজস্ব ল্যাবরেটরি। এই তলায়ই রয়েছে বিজিএমইএ-এর নিজস্ব ডিটরিয়াম। ৩য় তলায় রয়েছে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের কাওরান বাজার শাখার কার্যালয়। ৪র্থ তলা ও ৫ম তলায় রয়েছে বিজিএমইএ-এর নিজস্ব অফিস। ৬ষ্ঠ তলায় রয়েছে, প্রাইম ইনস্যুরেন্সের অফিস। রয়েছে পিপলস গ্রুপের অফিস, বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘আইটিএস’-এর অফিস, ট্যাকার অ্যাসোসিয়েশন অফিস, জার্মানিয়া করপোরেশন অফিস। এছাড়া ইজি সেলারি নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিসও রয়েছে এই তলায়।

৭ম তলায় রয়েছে, বিজিএমইএ-এর প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমানের নিজস্ব মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বান্দো ডিজাইনের অফিস। একই তলায় রয়েছে একোয়া মেরিন ও ক্লিপটন গ্রুপের অফিস। ৮ম তলায় রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাঁকা-এর দফতর। ৯ম তলায় রয়েছে সাভার গ্রুপের অফিস, শিপা গ্রুপের অফিস। ১০ম তলায় রয়েছে রূপা ফ্যাশন নামের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অফিস। ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ তলায় রয়েছে বিডিএল গ্রুপের অফিস আর ১৫ তলায় রয়েছে অ্যাপারেল ক্লাব। এখানেই রয়েছে সুইমিং পুলসহ খেলাধুলার নানা ধরনের সুবিধা।

Bootstrap Image Preview