Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বুধবার, মে ২০২৪ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মেজরের স্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধে ছয় শহীদের মা এখন ভিক্ষুক!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০১৯, ০৭:৫১ PM
আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯, ০৮:১৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে স্বামী ও ৬ সন্তান শহীদ হয় মেহেরজান বিবির। তিনি এখন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ান জীবিকা অর্জনের জন্য। সব হারিয়ে তার এখন ঠাঁই হয়েছে ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর আবাসন ও আশ্রয়ন প্রকল্পের ৩ নং ব্যারাকের ১১ নং কক্ষে।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ ৮৮ বছর বয়স্কা অসহায় মেহেরজান বিবি প্রতিদিন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করেন। তার দুঃখে ভারাক্রান্ত জীবন কাহিনী বলতে বলতে অঝোরে চোখ বেয়ে নেমে আসে বেদনার অশ্রু। নিজে কাঁদেন এবং অন্যকেও কাঁদান। এই বয়সে দুই বগলে স্টেচারে ভর দিয়ে গ্রামের দারে দারে দু’মুঠো ভিক্ষার জন্য ঘুরে বেড়ান মেহেরজান। চরম অসহায়ত্বের মাঝে দিন কাটছে তার। সহায় সম্বলহীন মেহেরজারেন আকুতি এখন একটু বেঁচে থাকার।

এই শহীদ জননীর পৈতৃক নিবাস চাঁদপুর সদর উপজেলার বাবুর হাটস্থ ২৬ নং দক্ষিণ তরপুর চন্ডী গ্রামে। ১০ অক্টোবর ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা ইব্রাহীম উকিল, মা বিবি হনুফা। তারা ছিলেন ৬ ভাই বোন। সোনাগাজী উপজেলার ৬নং চরছান্দিয়া ইউনিয়নের বড়ধলী হাজী বাড়ির মরহুম মমতাজ উদ্দিনের ছেলে সুবেদার মেজর এ টি এম সামসুদ্দিনের সাথে মেহেরজান বিবির বিয়ে হয়। পঞ্চাশের দশকে বড়ধলী গ্রাম নদী গর্ভে বিলিন হলে নিঃস্ব হয়ে তারা শহরে চলে আসেন। বাসা ভাড়া করেন ঢাকার মিরপুর ১ নাম্বারে জালাল দারগার বাড়িতে।

মেহেরজান বিবি’র ভাষ্য মতে, তার ৮ পুত্র ও ২ মেয়ে ছিল। তার ছয় পুত্র এবং স্বামী এ টি এম সামসুদ্দিন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হন।

শহীদ ছেলেরা হলেন- ছায়েদুল হক (তৎসময়ে সিলেটে রিলিফ অফিসার পদে কর্মরত), দেলোয়ার হোসেন, বেলায়েত হোসেন, খোয়াজ নবী, নুরের জামান ও আবুল কালাম। বাকী দু’পুত্র শাহ আলম ও শাহ জাহান, তার খোঁজ-খবর নেন না এবং তাদের সন্ধানও তিনি জানেন না। দুই মেয়ে মরিয়ম বিবি ও হাসনা বিবিও মারা গেছেন।

মেহেরজান বিবি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী তার স্বামী ও ৬ সন্তানকে হত্যা করে খ্যান্ত হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার জানতে পেরে মিরপুরে তাদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে তিনি ঢাকার মিরপুরে বাংলা মিডিয়াম হাই স্কুল (বর্তমানে মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়) এর শিক্ষিকা ছিলেন জানান।

মেহেরজান বিবি জানান, স্বাধীনতার পর তার দুঃখ-কষ্টের কথা শেখ মনির দৈনিক বাংলা বানী পত্রিকায় ছাপা হলে তখন তিনি বঙ্গবন্ধুর নজরে আসেন তিনি। বঙ্গবন্ধু তাকে ও তার এক পুত্রবধূ করফুলের নেছাকে ডেকে নিয়ে দুই হাজার টাকা করে অনুদান দেন এবং বঙ্গবন্ধু মেহেরজান বিবিকে পবিত্র হজ্ব পালন করান।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর স্বামী সন্তানদের শহীদ হওয়ার খবরে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিনেও তার পুরাপুরি মানসিক সুস্থতা ফিরে আসেনি। স্বজনদের হারিয়ে চরম অসহায়ত্বে পড়ে ভিক্ষাভিত্তির পথ বেছে নেন তিনি।

২০০৯ সালে ফেনী রেল স্টেশনে ভিক্ষা করতে দেখে জনৈক জিআরপি পুলিশ তাকে ফেনী জেলা প্রশাসনে পাঠায়। তখন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাকে পুর্ণবাসনের ব্যবস্থা করা হয় ধর্মপুর আবাসন প্রকল্পে। সেই থেকে তিনি এখানে বসবাস করছেন।

সোনাগাজী উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ নাসির উদ্দিন বলেন, মেহেরজান বিবি সম্পর্কে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে, তবে কোন কাজ হয়নি। তার স্বামী-সন্তান যে শহীদ হয়েছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমি গেজেটে তার নামও দেখেছি।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ফেনী জেলা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার আবদুর রহমান মজুমদার বলেন, দীর্ঘদিন থেকে মেহেরজান বিবির সাথে আমার সম্পর্ক। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করেন এবং ছেলে ডাকেন।

ফেনীর জেলা প্রসাশক মনোজ কুমার রায় বলেন, আশ্রায়ন প্রকল্পে সুবিধা ভোগীর একজন মেহেরজান। আমরা তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার ছয় সন্তান ও স্বামী হারিয়েছেন। এই ছাড়া তার অনেক করুন কাহিনী শুনেছি। তার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

Bootstrap Image Preview