Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মীরসরাইয়ের নান্দনিক তাজমহল মসজিদ

ইমাম হোসেন, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০১৯, ১০:১৮ AM
আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯, ১০:১৮ AM

bdmorning Image Preview


বাহির থেকে দেখতে অনেকটা ভারতের আগ্রার তাজমহলের মত। দবদবে সাদা রঙে আবৃত মসজিদটি এক নজর দেখার জন্য অনেকে ছুটে আসেন। অনেকে আবার খালি মসজিদ এবং মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে স্মৃতির পাতায় রেখে দিয়েছেন। কার্পেটিং করা সড়ক ঘেষে চার দেয়ালের সীমানা প্রাচীরের মধ্যখানে এমন একটি মসজিদ দেখার অনুভূতি অনেকেরই জাগতে পারে।

শুধু কি তাই, মসজিদের সামনে সবুজ বেষ্টনী আর ফ্লোর করা বিশাল মাঠ। দু’পাশে দু’টি পুকুর। পুকুরে সানবাঁধানো ঘাট, পুকুর ধারে ঘাটের পাশে কাঠ বাদাম গাছের মেঘের মত ছায়া। আহা! এখানে বসে পড়ন্ত বিকেলে কি মধুর সময় কাটানো যায়। যা স্বচোখে না দেখলে বোঝাই যাবে না। এমন সুন্দর নৈসর্গিক একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন যে ব্যক্তি বিশ্বাস করা যায় তিনি খুব সুন্দর একটা মনের মানুষ।

মানুষের মনের সৌন্দর্য যদি হয় তার বাহ্যিক শৈল্পিক কর্মে। তাহলে বলা যায় এই তাজমহল মসজিদের প্রতিষ্ঠাতার মনের সৌন্দর্য কতটুকু ছিল। কত বড় মনের মানুষ আর দানবীর হলে তিনি এমন একটি সৌন্দর্যের নিদর্শনে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। শুধু তাই নয়, মসজিদকে ঘিরে দু’পাশে সুবিশাল দু’টি একাডেমিক ভবনও নির্মাণ করেছেন। এতে অঞ্চলের মানুষের মাঝে নিরক্ষরতার গ্লানি মুছে দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এখানে একটি দাখিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

মীরসরাই উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের জোরারগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে এই মসজিদের অবস্থান। যাকে স্থানীয়রা এক নামে “তাজমহল মসজিদ” নামে চিনেন। পুরো ১ একর জমির উপর একটি মসজিদ, দু’টি একাডেমিক ভবন, মসজিদের দু’পাশে দু’টি পুকুর। যাতে রয়েছে সানবাঁধানো ঘাট। আর মধ্যখানে রয়েছে সবুজ ঘাসের বেষ্টনী আর ফ্লোর করা বিশাল মাঠ। সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এমনি দৃশ্য। পুরো মসজিদটি সাদা রঙে আবৃত। এটি তৈরী করা হয়েছে ভারতের আগ্রার তাজমহলের আদলে। মসজিদটি ৩ গম্বুজ বিশিষ্ঠ যার চার পাশে সাঁই দাড়িয়ে আছে চারটি পিলার।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মসজিদটির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বিগত বাংলা ১৯৯৭ সালের দিকে ইংরেজী হিসেবে দাঁড়ায় ১৯৯১ সাল। স্থানীয় ৬ নং ইছাখালি ইউনিয়নের বাসিন্দা মরহুম মৌলভী নজির আহমদের ছেলে প্রয়াত আলহাজ সফিউল্লাহ তার নিজস্ব জমিতে এই মসজিদটি স্থাপন করেন। সে সময় তিনি প্রায়ই ভারতে সফরে যেতেন। তখন তিনি তাজমহলের সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধহন। পরে তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, তাজমহলের আদলে দেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করবেন। সেখানে এক প্রকৌশলীর সহায়তায় আগ্রার ওই পুরো তাজমহলের আদলে হার্ডবোর্ডে সম্পূর্ণ একটা নকশা তৈরী করেন। যা পরবর্তীতে তিনি স্বদেশে এসে প্রকৌশলীর সহায়তায় স্থানীয় বিল্ডংয়ের ঠিাকাদার তোফায়েলকে এটার নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেন। সে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে অতঃপর সম্পূর্ণ মসজিদটি নির্মাণ করেন।

সূত্রে আরো জানা যায়, মসজিদটির নামকরণ করেন, তার ছেলে মরহুম ফখরুদ্দিনন মাহমুদ জামে মসজিদ প্রকাশ তাজমহল মসজিদ নামে। উল্লেখ্য ফখরুদ্দিন মাহমুদ ভারতে শিক্ষার্জনের জন্য যান। সেখানে অনাকাঙ্খিত একটি  দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। পরে তার স্মৃতি স্বরুপ মসজিদটির নামকরণ করা হয়। এদিকে আলহাজ সফিউল্লাহ শুধু মসজিদ নির্মাণ করে খ্যান্ত হননি। মসজিদের খোরাক মুসল্লি জোগান দিতে মসজিদের উত্তর এবং দক্ষিণ প্রান্তে দ্বিতল বিশিষ্ট দু’টি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করেন। সেখানে বিগত ২০০০ সাল থেকে একটি দাখিল মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হয়। যা তার পিতা মরহুম মৌলভী নজির আহমদের নামে নামকরণ করেন “মৌলভী নজির আহমদ আদর্ম দাখিল মাদরাসা হিসেবে।” বর্তমানে উক্ত মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রমে উপজেলার শ্রেষ্ঠ একটি বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে। উপজেলা জুড়ে বেশ নাম ডাক রয়েছে মাদরাসাটির।

এদিকে মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, মসজিদটি দোতলা বিশিষ্ঠ। যার নীচ তলায় পুরুষরা একসাথে জামায়াতে ২৫০ জন, আর দোতলায় অনুরুপ মহিলারাসহ মোট ৫০০ জন এভাবে নামাজ আদায় করতে পারবেন। দোতলায় উঠার জন্য মসজিদের ভেতরে দু’পাশে দু’টি সিড়িও রয়েছে। প্রতিদিন মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়রা একসাথে জোহরের নামাজ আদায় করেন। অনেকে নামাজ আদায় করার এবং মসজিদের আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এখানে আসেন। স্থানীয়রা অনেকে বিকেলে আছরের নামাজ আদায় করে পুকুর ঘাটে কিংবা মাঠে বসে গল্প করেন মাগরিব পর্যন্ত। আবার অনেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে এশার পর্যন্ত এখানে বসে সময় কাটান। সম্পূর্ণ নিরিবিলি পরিবেশ হওয়ায় বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণা বাতাসে নিজেকে সপে দিয়ে অনেকে গল্পের ফাঁকে মাঠে ঘুমিয়ে পড়েন অপকটে। 

Bootstrap Image Preview