Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বনানীতে আগুন: হঠাৎ সাইকেল নিয়ে হাবিবুরের পেছনে এসে দাঁড়ায় ভাই

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০১৯, ০৪:৪৫ PM
আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯, ০৫:০৫ PM

bdmorning Image Preview


রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শুনেই ভাই আহসান হাবিবের (২৪) খুঁজে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন হাবিবুর রহমান। আহসান হাবিব এফআর টাওয়ারের ২০ তলায় অবস্থিত কাশেম গ্রুপের অফিস অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। ঘটনাক্রমে অফিসের কাজে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলামোটরে যান তিনি। এ কথা জানতেন না মামাতো ভাই হাবিব। কোনোভাবেই তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। মোবাইলফোনও ছিল বন্ধ। আতঙ্কে ছটফট করছিলেন তিনি। এমন সময় সাইকেল নিয়ে হাবিবুরের পেছনে এসে দাঁড়ায় আহসান।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে এফআর টাওয়ারের ৯ তলা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। আগুন নেভাতে বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট কাজ করলেও দুই ঘণ্টায় (বেলা ২টা ৫০মিনিট পর্যন্ত) আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। ভবনে আটকে পড়াদের উদ্ধারে দুটি হেলিকপ্টার কাজ করছে।

একজন ভয়ার্ত স্বজনকে আবেগ প্রকাশ করতে দেখা যায় ভয়াবহ আগুন লাগা এফআর টাওয়ার ভবনের সামনে। তার মতো আরও অনেকেই নানা আশঙ্কায় সময় পার করছেন। তাদের মধ্যেই একজন ছিলেন হাবিবুর রহমান। কিন্তু তিনি ভাগ্যগুণে তার ভাইকে অক্ষত ফিরে পেয়েছেন।

আহসান হাবিব জানান, তার অফিসের সবাই নিরাপদে বেরিয়ে এসেছেন বলে তিনি শুনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি।

ভবনটির ২০ তলার ওপর থেকে এক যুবককে বাঁশ দিয়ে গ্লাস ভেঙে ভেতরের ধোঁয়ার কুণ্ডলি থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। আটকরা বারবার আকুতি জানিয়ে বলছিলেন, আমাদের বাঁচান। সিঁড়ি না পাঠালে আমরা মারা যাব।

এদের মধ্যে একজন নারী কর্মী ফেসবুক লাইভে এসে সিড়ির জন্য আকুতি জানাচ্ছেন। না হয় তারা বাঁচতে পারবেন না বলে জানাচ্ছেন।

সেজুতি স্বর্ণা নামের একটি ফেসবুক ওয়াল থেকে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা একজন বলছেন, ‘আমাদের জন্য সিঁড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তা না হলে ধোঁয়ায় আমরা মারা যাবো।’ আরেকটি ভিডিওতে তিনি জানালা দিয়ে নিচের রাস্তা দেখিয়ে বলছেন, ‘আমরা ভেতরে আটকা।’

এক উদ্ধারকর্মী জানান, ‘ভবনের আট তলা থেকে একটি মেয়ে তার ধরে ধরে নামার চেষ্টা করছিল। তখন হাত ফসকে মাটিতে পড়ে যায়। এর পর পর আরও দুইজন পুরুষ পড়ে যায়। আমি নিজে এই তিনজনকে সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। মেয়েটার পুরো শরীরে কাচ লেগে ছিল।’

এদিকে, ভবনের ভেতর আটকা পড়েছেন অনেকে। জীবন রক্ষার্থে অনেকে ভবনের ছাদেও আশ্রয় নিয়েছে। পাশের ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যোগ দিয়েছে বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার। এরই মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস। এরমধ্যে আশেপাশের ভবন থেকে সরে গেছেন বাসিন্দারা। এছাড়া আগুনের উত্তাপে ভবনের কাঁচ ফেটে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার এনায়েতউল্লাহ জানান, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ২১ তলা ভবনটির ৯ তলায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করছে। সেখানে আটকা পড়া অনেকেই ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্রেন লেডারের (যন্ত্রচালিত মই) সাহায্যে তাদের সেখান থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করার চেষ্টা হচ্ছে। আগুন নেভানোর সুবিধার জন্য আশেপাশের রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগুন নেভাতে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার কাজ করছে। পাশাপাশি সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছে।

Bootstrap Image Preview