প্রভুভক্ত প্রাণী হিসেবে মনিবের প্রতি কুকুরের ভালবাসা নানা সময়ে বিবেক নাড়া দেয়। কখনো মনিবের প্রতি নিদারুণ ভালোবাসা, কখনো মনিবকে রক্ষা, আবার কখনো মনিবের জন্য অপেক্ষা করতে করতে জীবনকে উৎসর্গ করা। এর বাইরে প্রভুভক্ত এই প্রাণী নিয়ে হয়েছে নানা সিনেমাও।
তবে এসব ঘটনাকে ছাড়িয়ে এবার শুধু মনিবকে নয়, মনিবের পুরো পরিবারকে রক্ষা করে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার এক ঘটনার জম্ম দিয়েছেন প্রভুভক্ত এই প্রাণীটি। কুকুরের কারণেই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান পরিবারের সবাই।
গত শুক্রবার মার্কিন এক নাগরিকের বাড়িতে আগুন লাগে। ওই ঘটে বর্ণনায় টুইট করেন বাড়ির মালিক। তিনি লেখেন, গত শুক্রবার রাতে তার স্ত্রী ও সন্তানরা বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল, মধ্যরাতে তার কুকুরটি খুব জোরে ডাকতে শুরু করে। কেন এত জোরে চিৎকার করছে তা দেখতে ওই ব্যক্তি তার শোয়ার ঘরে প্রবেশ করেন। খুব ভয়ে ভয়ে বারান্দায় যান তিনি। এরপর ঘরের এক কোন থেকে আড়ালে তিনি কমলা রঙের উজ্জ্বল কিছু জ্বলজ্বল এবং শব্দ করছিল-এমন কিছু দেখতে পান।
আমেরিকান নাগরিক ওলাইসেস এস কুকম্যান আগুন লাগার ওই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লেখা টুইট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এই ঘটনায় কুকুরটিকে ‘গোল্ডেন রিট্রাইভার’ অ্যাখা দিয়ে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ব্যবহারকারীরা।
টুইটারে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টা পর মধ্যরাতে শোয়ার কক্ষে হাঙ্ক (কুকুর) প্রচণ্ড জোরে ডাকাডাকি করছিল। তখন আমার স্ত্রী এবং বাচ্চারা ঘুমিয়েছিল। আমি তখন অন্য কক্ষে মুভি দেখা শেষ করেছিমাত্র। কিন্তু হাঙ্ক কোনোভাবেই তার ডাকাডাকি থামাচ্ছিল না। এরপর আমি বিছানা থেকে নেমে শোয়ার কক্ষে গেলাম এবং তাকে (হাঙ্ক) থামানোর চেষ্টা করলাম। এরপর যতদ্রুত সম্ভব আমি বাড়ির কর্ণারে গেলাম। কামরায় প্রবেশ করে সেখান থেকে উজ্বল কমলা রঙের কিছু দেখতে পাই।’
টুইটারে ঘটনাটি বর্ণনা করার সময় গর্বিত ওই মনিব কুকুরের ছয় বছরের আগের একটি ছবি শেয়ার করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমি হাঙ্ক সম্পর্কে আপনাদের একটি গল্প বলতে চাই। আমি জানি আপনারা এটাকে একটা খুবই ভালো ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করবেন।’
ডেইলি মেইল-এর এক প্রতিবেদনে মার্কিন নাগরিক বলেন, সেখানে বড় ধরনের কোনো একটি কাঠ এবং পেইন্ট জাতীয় কিছু পুঁড়ছিল। ঈশ্বর ভালো জানেন, সেখানে আসলে আর কী কী ঘটেছিল। উজ্জ্বল কমলা রঙের ওই আলো থেকে কিছুক্ষণ পর দেখি আগুনের ধোয়া জাতীয় কিছু খুব দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।’
এই ব্যক্তি বলেন, ‘এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর আমরা প্রত্যেকে হাঙ্কের চিৎকারের ঘটনায় বিষয়টি জানতে পারি এবং আমি ও আমার পরিবার বাড়িতে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করি। পাশের প্রতিবেশীরা আগুনের বিষয়টি দেখতে পেয়ে টর্চ নিয়ে বেরিয়ে আসেন। এরপর আমি ও আমার পরিবার এবং কুকুর নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসি। আমার স্ত্রী গতকাল আমাকে স্মরণ করিয়ে দেন হাঙ্ক ছয় বছর আগে তার নতুন জুতার একটি স্লিপার খেয়ে ফেলেন, সেখান থেকে সে অপরাধ বিষয়ক কোনো কিছু হলে বুঝতে পারে।’
তারপর তিনি আবারও আগুনের ওই ঘটনার বর্ণনা করেন, তিনি বলতে থাকেন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কিভাবে কুকুরটি তাদেরকে রক্ষা করেছিল।
এই ঘটনা অন্যভাবেও শেষ হতে পারত। কয়েক মিনিটের মধ্যে আমাদের বাড়ির চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং আগুন নির্বাপনকারীরা সেখানে এসে আগুন দেখতে পায়। তারা সেখানে এসে আমাদের প্রত্যেকে রক্ষা করে, তখন আমরা বাড়িতেই ছিলাম।
গর্বিত ওই বাবা এ লেখার শেষে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লেখেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সত্যিই বিস্ময়কর। তারা বাতাসের বেগে আমাদের বাড়িতে এসে পুরো বিষয়টি নিজেদের আয়ত্ত্বে নিয়ে নেন। যেটা সত্যি অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতার প্রমাণ দেয়।'
তবে এ ঘটনায় পরিবারের জীবন রক্ষায় পুরো ক্রেডিট দিতে চান তার পোষ্য কুকুর হাঙ্ককে। গর্বিত ওই কুকুরের মালিক আরও লেখেন, ‘আজকে আমি তাদের সঙ্গে যারা এ ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আমি এই ঘটনাকে কখনই ভুলব না। কখনই না।’
এই ঘটনাটি টুইট করার পর ৩০ হাজার লাইক, রিটুইট এবং কমেন্ট ও ফলোয়াররা এই ঘটনা উল্লেখ করার জন্য প্রশংসা করেছেন।
এ ঘটনায় একজন ফলোয়ার হাঙ্ককে ভালবেসে লেখেন, ‘তুমি সবাইকে রক্ষা করেছ।’ আরেকজন ব্যবহারকারী লেখেন, ‘বিগ লাভ ফর হাঙ্ক।’