আমরা মরে গেলে তারপর কি ওসি সাহেব দেখবেন? দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচারের স্বীকার হচ্ছি আমরা। ৩ দিন আগে আমার স্বামীকে হাতুরী, হকি দিয়ে পিটিয়ে ডান হাত ও দুই পা ভেঙ্গে দিয়েছে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এক পায়ের রগ কেটে ফেলেছে। আগেও বার বার বাড়ি-ঘরে হামলা করেছে। আমরা থানায় অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না থানা পুলিশ। কান্না জড়িত কন্ঠে এসব বলেন ভুক্তভোগী সালমা বেগম।
জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শেখ ফরিদ (৪৭) নামের এক ব্যাক্তিকে হাতুরী, হকি দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে। চাপাটি দিয়ে কুপিয়ে রগ কাটাসহ রক্তাক্ত জখম করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিকাল ৫টার দিকে সিরাজদিখান উপজেলার ঢাকা-মাওয়া সড়কের লক্ষ্মিবিলাস কালীবাড়ি এলাকায়।
কেয়াইন ইউপি সদস্য শারমিন বেগম ফরিদকে উদ্ধার করে শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এবং পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়।
ফরিদের পরিবারের লোকজন সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেলে একদিন চিকিৎসার পর শুক্রবার তাকে পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করে। সে উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের চালতিপাড়া গ্রামের মৃত লাল চান শেখের বড় ছেলে ও একটি হাউজিং কোম্পানীর (সিলভার সিটি) সাইট ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত।
শেখ ফরিদের স্ত্রী সালমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, আমার স্বামী কারো সাথে কোন ঝগড়া ঝামেলায় নাই। চালতীপাড়া গ্রামের মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে সন্ত্রাসী সেলিমের সাথে আমাদের পারিবারিক ঝামেলা রয়েছে। সেই পূর্ব শত্রুতার কারণে সেলিমের লোকজন কয়েকবার হামলা করেছে আমাদের বাড়িতে।
গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে আমার স্বামী কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে চালতীপাড়া গ্রামের সেলিমের ছোট ২ ভাই, মেয়ের জামাই নান্নু, মামুন, আবু কালাম, অনিক, কামালসহ ১০-১২জন এই হামলা করে। হাসপাতালে ভর্তির পর বৃহস্পতিবার থানায় রাতে লিখিত অভিযোগ করি। পুলিশ তদন্তে যায় নাই।
শুক্রবার (২২ মার্চ) বিকালে আমি নিমতলা হয়ে ওদের ভয়ে না গিয়ে অন্য রাস্তায় থানায় যাওয়ার জন্য অটোতে উঠি। বীরতারা হয়ে নন্দনকোনার রাস্তাদিয়ে থানায় যাওয়ার সময় সেলিম বাহিনীর লোকজন ২০/২২ টা মোটর সাইকেলযোগে আমার অটোরিকশা থামায় হুমকী দেয় যে 'থানায় মামলা করলে মেরে ফেলবে'।
এসময় আমার মাথায় পিস্তল নান্নু নামে একজন বাকিদের হাতে স্টীলের ফ্লাটবার ও হকি ছিল। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। পুলিশ দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করলে, আমাদের আরো বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলতে পারে।
এর আগে প্রায় দুই মাস আগে আমার আরেক দেবরকে দুই পায়ে দুইটি টেটাবিদ্ধ করেছে তারা। সে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকারপর এখন বাড়িতে পঙ্গু জীবনযাপন করছে।
সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মারামারি হয়েছে তবে রগ কেটেছে এটা সত্য নয়। আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি, রড দিয়ে আঘাত করায় থেতলে গিয়েছে। যারা মারামারি করে নাই এমন অনেকের নাম অভিযোগে রয়েছে। ঘটনায় যারা জড়িত না অযথা তাদের হয়রানি যেন না হয় সেজন্য তদন্ত চলছে। এজন্য ডিলে হচ্ছে। প্রকৃত যারা ঘটনায় জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।