Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অভাবী পরিবারের বোঝা নয়, গর্ব প্রতিবন্ধী রুমানা

জাকির হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০১৯, ১১:৪৭ AM
আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯, ১১:৪৭ AM

bdmorning Image Preview


অভাবী পরিবারে প্রতিবন্ধী সন্তান যেন অভিশপ্ত। তবু সমাজে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা সবার মতো করে সুখের সংসার করার স্বপ্ন দেখতেন বাক প্রতিবন্ধী রুমানা। সন্তানের স্বপ্ন পূরণে পরিবারের লোকজন ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময় মো. কাজল ইসলাম নামে এক যুবকের সাথে তার বিয়ে দেয়। বিয়ের পর কয়েকদিন ভালই চলছিল তার সংসার জীবন। কিন্তু বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তার সংসার জীবন। দিনমজুর স্বামী তার উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে।  

তার ভবিষ্যত জীবনের কথা চিন্তা করে স্বামীর নির্যাতন সে নিরবে সহ্য করতে থাকে। কিন্তু তাতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। বিয়ের প্রায় দেড় বছরের মাথায় একদিন স্বামী তাকে তালাক দেয়। হতাশার অন্ধকারে তার সমস্ত স্বপ্ন বিলীন হয়ে যায়। এমনি করে চলতে থাকে তার দু:সহ জীবন। রুমানা ফিরে আসে তার অভাবী বাবা-মায়ের কাছে সংসারের বোঝা হয়ে।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের খাটিয়াদীঘি গ্রামে রুমানা খাতুন। জন্ম  ১৯৯১ সালের ১৮ মে। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে রুমানা সবার ২য়। জন্ম থেকেই বাক প্রতিবন্ধী। বাবা আব্দুর রহমান একজন কৃষক। নিজস্ব কোন আবাদী জমি নাম থাকলেও এক বিঘার মতো খাস জমি বরাদ্দ পেয়েছে যেখানে কিছু ফসল আবাদ করতে পারে। এই সামান্য উপার্জনে সংসার চালানো কঠিন হতো। এ কারণে অভাব অনটন সবসময় লেগেই থাকে তাদের পরিবারে।আর এই অভাবী সংসারে বোঝা হয়েছে দাড়িছে প্রতিবন্ধী মেয়ে।

২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ডিআরআরএ সংস্থার এর সহযোগিতায় এস এল এফ কর্মসূচির আওতায় দীপশিখা বীরগঞ্জ এলাকায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করে। অন্য ১০ জন প্রতিবন্ধীর মতো রুমানা তার পিতামাতাসহ দীপশিখা আয়োজিত ২ দিনব্যাপী 'প্রতিবন্ধী পরিবার উন্নয়ন পরিকল্পনা' শীর্ষক এক কর্মশালার অংশগ্রহণ করে।

উক্ত কর্মশালায় রুমানার সামর্থ বিবেচনা করে তার পিতামাতা রুমানাকে কেন্দ্র করে ৫ বছর মেয়াদি একটি উন্নয়ন কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আয় বৃদ্ধিমূলক কাজ হিসাবে রুমানার পিতা-মাতা প্রথমেই রুমানার দ্বারা বাস্তবায়নযোগ্য গরু পালন প্রকল্পটি বেছে নেয়।

রুমানার পরিবার ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে ২২ হাজার ৭০০'শ টাকা দিয়ে একটি বকনা বাছুর ও মোটাতাজাকরণের জন্য একটি গরু ক্রয় করে। গরু দু'টি ক্রয়ের জন্য দীপশিখা এস এল এফ কর্মসূচি হতে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়, বাকী ২ হাজার ৭০০'শ টাকা পরিবার থেকে প্রদান করে।

রুমানাকে বোঝানো হয় যে গরু দু'টি তার জন্য কেনা হয়েছে। গরু দু'টি পাওয়ার পর রুমানা খুব খুশি হয়। কেনার পর থেকে রুমানাই গরু দু'টিকে খাওয়ানো ও পরিচর্যা করতে থাকে। তার পরিচর্যায় অল্প সময়ের মধ্যে গরু দু'টির স্বাস্থ্য ভাল হতে শুরু করে।

পরে গরু বিক্রির টাকা থেকে দীপশিখা থেকে গৃহীত সমুদয় অর্থ ফেরত দেয়। গরু পালনের পাশাপাশি রুমানা দীপশিখা সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে গত ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে ৬ মাস মেয়াদি সেলাই প্রশিক্ষণ কোর্স সফলভাবে সমাপ্ত করে।

বর্তমানে সে গরু পালন এবং সেলাইয়ের কাজ মাধ্যমে উপার্জনের মাধ্যমে একজন স্বাবলম্বী নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার সাফল্যের ২০১৭ সালে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। রুমানার বাবা-মা এখন আর তাকে বোঝা মনে করে না।

 

Bootstrap Image Preview