Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ রবিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাকি মাত্র ১ বছর, কতদুর নারীর ক্ষমতায়ন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০১৯, ১১:৫৫ AM
আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯, ১২:০৪ PM

bdmorning Image Preview


গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০-খ অনুচ্ছেদে ২০২০ সালের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাকি মাত্র ১ বছর। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে না হলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে। আইনি এই বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও সে লক্ষ্য পূরণে এখনো তেমন অগ্রগতি নেই।

ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন—স্থানীয় সরকারের এই পাঁচ স্তরে নারীর অংশগ্রহণ সংরক্ষিত থাকলেও যথাযথ ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইউপি, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে পুরুষ প্রতিনিধিদের তুলনায় তিন গুণ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলেও উন্নয়নকাজ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত নারীরা। উপজেলা ও জেলা পরিষদের চিত্র একই রকম। নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে স্থানীয়  সরকারব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে নারীদের কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করা আবশ্যক বলে মনে করেন নারী প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা।

আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বড় দলগুলোর সর্বশেষ কাউন্সিলে গঠিত কমিটিগুলো পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে গঠিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে ১৯.৪৮ শতাংশ, সভাপতিমণ্ডলীতে ২৫ শতাংশ এবং উপদেষ্টা পরিষদে ৪.৮৭ শতাংশ নারী। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীতে নারী ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো স্তরেই নারীর ৩৩ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নেই।

বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিলে গঠিত জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ১২.৭৪ শতাংশ নারী। এ দলের ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে দলের চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য কোনো নারী নেই। চেয়ারপারসনের ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিলে নারী ৮.২১ শতাংশ। জাতীয় নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের মধ্যে নারী মাত্র ৯.৫৬ শতাংশ।

জাতীয় পার্টির বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে ৬.৫৭ শতাংশ নারী। এর মধ্যে প্রেসিডিয়ামে ৯.৭৫ শতাংশ। ওই তিন দলের অনেক নারী নেত্রীর অভিযোগ, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নারী বলেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন না তাঁরা।

ওই তিনটি দলের মাঠপর্যায়ের কমিটিগুলোতে নারীদের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা কমিটিগুলোও ৩৩ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে অনেক পিছিয়ে। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য সংখ্যা ৭১। এর মধ্যে নারী ১৯.৭১ শতাংশ। জাতীয় পার্টির ১৪৭ সদস্যের কমিটিতে নারী ৮.১৬ শতাংশ। আর বিএনপির কমিটিতে নারী ১১.৭৬ শতাংশ।

অন্য দলগুলোর মধ্যে সিপিবির একাদশ কংগ্রেসে গঠিত ৪৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী মাত্র ছয়জন অর্থাৎ ১৩.৩৩ শতাংশ। জাসদের ১০৯ সদস্যের কমিটিতে নারী মাত্র ১৩ জন, শতাংশের হিসাবে যা ১১.৯২।

সার্বিক এই পরিস্থিতি সম্পর্কে  নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে মূল প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রাজনৈতিক দল। সংসদে, সরকারে, স্থানীয় সরকারে ‘টোকেন’ হিসেবে কিছু নারীকে রাখলেই হবে না; সমাজের পাওয়ার করিডরে, রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকারের উদাহরণ টেনেও লাভ নেই। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা যে নারী, তার প্রতিফলন রাজনীতি ও নির্বাচনে থাকা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তৎপর হতে হবে।’

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান (সংরক্ষিত) নাজিরা বেগম শিলা বলেন, ‘নির্বাচিত হওয়ার পর ভোটারদের কাছে ছোট হতে হয় নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের। কাজের পরিধি ও এখতিয়ার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না আমরা। উন্নয়নকাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ সব কিছু চেয়ারম্যানের ওপর ন্যস্ত থাকে।’

নেত্রকোনা সদর উপজেলার ৬নং লক্ষ্মীগঞ্জ ইউপির নারী সদস্য মমতা আক্তার বলেন, ‘চেয়ারম্যান কোনো কোনো কাজ দেন। চেয়ারম্যান না দিলে কোনো কাজ করার সুযোগ থাকে না। আমরা কাজ করতে চাই। নিয়ম অনুযায়ী আমাদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হলে ভালো হতো।’

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু সংখ্যাগত দিকটি নিয়ে ভাবলে প্রকৃত অর্থে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের সুযোগের পাশাপাশি নেতৃত্ব বিকাশের জন্য কর্মপরিধি ও এখতিয়ার ঠিক করে দেওয়ায় জরুরি।

স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদ ১৩২টি। ৩১৬ পৌরসভায় নারীদের জন্য সংরক্ষিত পদ ৯৮২টি। ৬১টি জেলা পরিষদে সংরক্ষিত আছে ৩০৬টি পদ। এ ছাড়া ৪৯২ উপজেলা পরিষদে আছে ৪৯২টি নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদ। দেশের চার হাজার ৫৭১টি ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৭১৩ সদস্য পদ সংরক্ষিত আছে নারীদের জন্য। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার চার স্তরে সারা দেশে নারীদের জন্য ১৬ হাজার ৫৯০টি পদ সংরক্ষিত থাকলেও তাঁদের দায়িত্ব এবং কাজের পরিধি সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে বলা নেই।

Bootstrap Image Preview