রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইদিন ব্যাপী আনর্ত নাট্যমেলার সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। অসম্প্রদায়িকতা ও বাংলা নাটককে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে এ ধরনের আয়োজন কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করছেন দুই বাংলার নাট্যবোদ্ধা ও আয়োজকরা।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যায় আনর্ত প্রাঙ্গণে (বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজী ভবনের সামনে) কিচ্ছানাট্য 'বেলাবতী কইন্যা' পরিবেশনের মধ্যদিয়ে এ মেলার সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বিকেল ৩ টায় 'থিয়েটার করিয়া কী হইবে- যদি কিছু হয় তবে চাই স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়' শীর্ষক এক আনর্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বক্তারা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থিয়েটারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশিলতা রক্ষা ও অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়াক্ষেত্রে থিয়েটারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। থিয়েটারের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের বিষয় তর্কবির্তক হয়।
পরে সবাই সম্মিলিতভাবে থিয়েটারের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের দাবি করে বলেন, ক্রমে এ দাবি জোরালো হবে।
আরিফ হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট নাট্যজন মামুনুর রশীদ, সুজন কান্তি দে, রশীদ হারুন, সাজেদুল আউয়াল, বাবুল বিশ্বাস, অন্তত হীরা, মাসুম রেজা, প্রশান্ত হালদার, তাপু শহীদ, কাজী সাঈদ হোসেন দুলাল ও কামার উল্লাহ সরকার।
মামুনুর রশীদ বলেন, আমি মনে করি না, মিডিয়াতে অভিনয় করা অপরাধ। একজন থিয়েটার শিল্পীর তো অন্য কোনো পেশা নেই। তাহলে সে কি আকাশের নীল আর বাতাস খেয়ে বেঁচে থাকবে? 'বিনোদনকর্মী' শব্দটি পত্রিকার আবিষ্কার।
মাসুম রেজা বলেন, থিয়েটার হলো ক্লাসিক্যাল মিউজিকের মতো। খুব কম মানুষ শোনে, শোনার জন্য ন্যূনতম জানাশোনা থাকা লাগে। আমাদের থিয়েটারের সর্বনাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেম, শিক্ষাব্যবস্থা। টিভি ডিরেক্টররা না। এখন থিয়েটারে শিক্ষার্থীদের পাওয়া যায় না। তারা ক্লাস টেস্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগরে শিক্ষক রাফিল শাহীন বলেন, এখানে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেম, শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বারবার বলছেন। সরকারযন্ত্র নিয়ে কেউ কথা বলছেন না। কিন্তু সবকিছুই কোনো না কোনোভাবে সরকারযন্ত্রের মধ্যে পড়ে। ভোট কীভাবে হয়, কোন প্রক্রিয়ায় হয় তা ভাবতে হবে।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি ও আনর্ত সম্পাদক রহমান রাজু বলেন, হয়ত আনর্ত থাকবে না, পৃথক মন্ত্রণালয় হবে না। তবে মনের কথাগুলো বলতে পারলে দীর্ঘদিন ধরে মনের মধ্যে জমা থাকা চাপা ক্ষোভ প্রশমিত হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, মলয় ভৌমিক, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, সালাউদ্দীন লাভলু, মাসুম রেজা প্রমূখ নাট্যবোদ্ধারা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (৪ মার্চ) বেলা ১২টায় ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে ভিন্নধর্মী আয়োজনে মেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।