Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১০ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

১৫ হাজারেরও বেশি সার্জারি করে পৃথিবীর ১০ জনের একজন দেবী শেঠি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ মার্চ ২০১৯, ০৮:৩৮ PM
আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৯, ০৮:৩৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসেন উপমহাদেশের আলোচিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি। তখন থেকেই মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয় তার সম্পর্কে জানার। বাংলাদেশের শিক্ষিত স্বাস্থ্য সচেতন বেশিরভাগ মানুষই জানেন।

তবুও তার সম্পর্কে জানতে চান অনেকেই।

কে এই দেবী শেঠি?

ভারতের কর্নাটক রাজ্যের ব্যাঙ্গালোর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে শেঠির নারায়ণা হৃদয়ালয় হাসপাতালটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান হাসপাতাল। ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি পৃথিবীর ১০ জনের একজন।

দেবি শেঠি ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণ কনাডা জেলার কিন্নিগলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নয় ভাইবোনের মধ্যে অষ্টম শেঠি মেডিকেলে পঞ্চম গ্রেডে পড়ার সময় তত্‍কালীন দক্ষিণ আফ্রিকার জনৈক সার্জন কর্তৃক বিশ্বের প্রথম হৃত্‍পিণ্ড প্রতিস্থাপনের কথা শুনে কার্ডিয়াক সার্জন হবার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৯১ সালে নয় দিন বয়সি শিশু রনি'র হৃত্‍পিণ্ড অপারেশন করেন যা ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম সফল শিশু হৃত্‍পিণ্ড অস্ত্রোপচার। তিনি কলকাতায় মাদার তেরেসার ব্যক্তিগত চিকিত্‍সক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর কিছুকাল পর তিনি ব্যাঙ্গালোরে চলে যান এবং মণিপাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৫,০০০ এর বেশি কার্ডিয়াক সার্জারি করেছেন।

রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিত্‍সা সেবা দেবার সাথে সাথে তার অর্থনৈতিক অবস্থা অর্থাত্‍ ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চান এবং সে মতে পদক্ষেপ নেন।

জানা যায়, দক্ষিণ ভারতে জন্ম নেয়া দেবী শেঠী ১৯৮২ সালে কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারী বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে সার্জারী বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নেন।

১৯৮৯ সালে লন্ডনের উচ্চাভিলাষী চাকরীর লোভ ত্যাগ করে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এখানে ডাঃ রায়ের সাথে তিনি কলকাতার গড়ে তোলেন ভারতের প্রথম হৃদরোগ চিকিত্‍সা হাসপাতাল বি এম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টার। কিন্তু ভারতীয়দের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ইউরোপিয়ানদের তুলনায় তিনগুন বেশী হওয়ায় এই একটি হাসপাতাল যথেষ্ট ছিল না। এজন্য ডাঃ দেবী শেঠী ও ডাঃ রায় মিলে আরো তিনটি হৃদরোগ চিকিত্‍সা কেন্দ্র গড়ে তোলেন, বি এম বিড়লা হার্ট সেন্টার যাত্রা শুরুর অল্প দিনের মধ্যে ভারতের শ্রেষ্ঠ হার্ট হাসপাতালের একটিতে পরিণত হয।

ডাঃ দেবী শেঠী নামক ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত চার হাজার শিশুর সফল হার্ট সার্জারী সম্পন্ন করেন।

১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ডাঃ দেবী শেঠি যে ৪০০০ শিশুর হার্ট সার্জারী সম্পন্ন করেন তাদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবার থেকে আসা এবং এদের সবাইকেই তিনি বিনা মূল্যে চিকিত্‍সা করেছেন।

ডাঃ দেবী শেঠি নিজের মা-বাবার বরাবরের অসুস্থতার কারনে একজন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন ডায়বেটিক রোগী। ডায়াবেটিকস বাড়ার কারণে পিতাকে তিনি অনেকবার অজ্ঞান হয়ে পড়তে দেখেছেন। এই পরিবারের কাছে তখন ডাক্তারের চেহারাটাই ছিল যেন এক ঈশ্বরের মূর্তি। কারণ চরম মূহুর্তে ওই ডাক্তারই ডাঃ দেবী শেঠির মা-বাবার জীবন বাঁচাতেন।

একদিন ডাঃ দেবী শেঠী একদিন একটি শিশুর জটিল অপেন হার্ট সার্জারী করছেন। এমন সময় তাঁর বিশেষ সহকারী অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করে বলেন- 'স্যার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোন করে লাইনে আছেন এবং আপনার সাথে জরুরী একটা আলাপ আছে বলেছেন'। ডাঃ শেঠি দেখলেন এই শিশুটির অস্ত্রোপচার এ দেরী হলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা তাই তিনি নিজের সহকারীকে বললেন-'পিএম-কে বলো আমি ওটিতে আছি এক ঘন্টা পর ফোন করার জন্য'। অবশ্যই এক ঘন্টা পর প্রধানমন্ত্রী ফের ফোন করেন।

বিশ্বের বৃহত্তম হৃদরোগ হাসপাতাল 'নারায়না ইন্সটিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়িন্সেস' ব্যাঙ্গালুরুতে বর্তমানে আছে ১০০০ শয্যা, ১০৭ জন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, ৫টি ক্যাথ ল্যাব, ১৫টি অপারেশন থিয়েটার এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫জন ছোট -বড় রোগীর অপেন হার্ট সার্জারী হয়।

Bootstrap Image Preview